৩৩ দিন পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুট স্বাভাবিক
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল অবশেষে স্বাভাবিক হয়েছে। দীর্ঘ ৩৩ দিন পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন স্বাভাবিক নৌরুটে যাতায়ত করছে যাত্রী ট্রলার ও স্পিডবোট।
রবিবার (৭ জুলাই) সকালে টেকনাফ ঘাট থেকে দুটি ট্রলার সেন্টমার্টিনে এবং সেন্টমার্টিন থেকে যাত্রী নিয়ে চারটি ট্রলার ও সাতটি স্পিডবোট টেকনাফে আসে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নৌযান চলাচল মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসনের সহযোগিতায় বিকল্পপথে দু’বার সেন্টমার্টিনে আসা-যাওয়া করে ট্রলার। পরবর্তী সাগর উত্তাল থাকার কারণে বিকল্পপথও বন্ধ হয়ে যায়।
অবশেষে রবিবার সকাল ৯টায় সেন্টমার্টিন জেটি থেকে যাত্রী নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে স্বাভাবিক পথে যাত্রা শুরু করে। এরপর ৯টা ২০ মিনিট, সাড়ে ৯টা ও ৯টা ৪০ মিনিটে আরও ৩টি ট্রলার যাত্রী নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে সেন্টমার্টিন ছেড়ে যায়। এছাড়া ৭টি স্পিডবোট টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে নিরাপদে ট্রলার ও স্পিডগুলো টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ পৌঁছে। এতে প্রায় ২৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। দীর্ঘদিন পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নৌযান চলাচল করছে। আগে মিয়ানমারের সামান্য অংশ অভ্যন্তর হয়ে নৌযানগুলো চলাচল করত। কিন্তু মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে এখন সাগরে জোয়ার আসলে বাংলাদেশের অভ্যন্তর হয়ে নৌযানগুলো চলাচল করছে। একই সঙ্গে সরকারী নির্দেশনা মতে প্রতিটি নৌযানে উঁচু করে জাতীয় পতাকা টাঙানো হয়েছে।
স্পিডবোট সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে স্পীডবোট চলাচল শুরু হয়েছে। শনিবার সেন্টমার্টিন থেকে ৭টি স্পিডবোটে যাত্রী নিয়ে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ পৌঁছে। রবিবার সকালেও ৭টি স্পিডবোট টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ এসে পৌঁছে। মূলত. সাগরে জোয়ার আসলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তর হয়ে নৌযানগুলো চলাচল করছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল। এ পর্যন্ত সেন্টমার্টিন থেকে যাত্রীবাহী চারটি ট্রলার ও সাতটি স্পিডবোট টেকনাফ পৌঁছেছে। রবিবার দুটি খাদ্যপণ্য বোঝাই ট্রলার টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে বিকালে দ্বীপে পৌঁছে। আশা করছি, সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে ১ জুন বিকেলে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা হওয়া পণ্যসহ ১০ জন যাত্রীসহ এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়। ৫ জুন সেন্টমার্টিনের স্থগিত হওয়া একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নির্ধারণের জন্য ভোট গ্রহণ হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রলারকে লক্ষ্য করে একই পয়েন্টে ফের গুলি করা হয়। ৮ জুন আরও এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। ১১ জুন একটি স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলি করে। প্রতিটি গুলিবর্ষণের ঘটনা-ই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলসীমায় ঘটেছে। গুলিবর্ষণের এসব ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ১২ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে যাত্রীদের আসা-যাওয়া ও পণ্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূল ব্যবহার করে ঝুঁকি নিয়ে সীমিত আকারে শুরু হয় যাত্রীদের আসা-যাওয়া। ১৪ জুন কক্সবাজার শহর থেকে দ্বীপে পণ্য নিয়ে যায় পর্যটকবাহী একটি জাহাজ।