৩ চিকিৎসক দিয়ে চলছে আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা
জেলার আমতলী উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ৩১টি পদের মধ্যে মাত্র তিনজন চিকিৎসক রয়েছে। ২৮টি চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় উপজেলায় আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলা সদরে ৫০ শয্যায় হাসপাতাল একটি, কুকুয়া ইউনিয়নের আজিমপুর বাজারে ১০ শয্যার হাসপাতাল একটি এবং আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর বাজারে ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী বাজারে একটি করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এসব হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট ৩১ জন ডাক্তারের পদ রয়েছে। এর মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জন, একজন জুনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট, একজন গাইনি কনসালটেন্ট, একজন ডেন্টাল সার্জন, একজন অঞ্জানবিদ, জুনিয়র কনসালটেন্ট নাক, কান, গলা, চোখ ও চর্ম রোগের প্রতিটি পদের জন্য মোট ছয়জন, একজন আরএমও ও দুইজন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা।
বর্তমানে ৩১ জন চিকিৎসকের মধ্যে দুইজন মেডিকেল অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আছেন আর বাকী ২৮টি চিকিৎসকের পদ দীর্ঘ দিন খালি রয়েছে। দুইজন মেডিকেল অফিসার গুলিশাখালী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হলদিয়া ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দুইজন চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি ভিত্তিতে আনা হয়েছে প্রেষণে।
আমতলী হাসপাতালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ডা. ফায়জুর রহমান নামে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার যোগদান করেন। যোগদানের পর ওই দিন বিকেল থেকেই এখন পর্যন্ত কর্মস্থলে তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন। কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে তাকে দু’দফা কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়াসহ তার বেতন ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে তার মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অফিসিয়াল ও প্রশাসনিক কাজের জন্য সব সময় ব্যস্ত থাকেন। এ অবস্থায় দুইজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে ৫০ শয্যায় হাসপাতালের বহি:বিভাগ, আন্ত:বিভাগ ও জরুরি বিভাগ চালানো মোটেই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা না পেয়ে আমতলী হাসপাতালে এসে ফেরত যাচ্ছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাব্বি গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এসেছিলেন আমতলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে চলে যান পটুয়াখালী জেলারেল হাসপাতালে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আগের মত হাসপাতালে এখন আর তেমন রোগী নেই। বহি:বিভাগের অধিকাংশ চিকিৎসকের রুম তালাবদ্ধ। রোগীরা এসে ঘুরে ফিরে আবার চলে যাচ্ছে। এসময় কথা হয় হলদিয়া থেকে আসা রুশিয়া নামের ষাটোর্ধ্ব এক রোগীর সঙ্গে তিনি জানান, ‘শরীর খাউজায় (চুলকায়) এইর লইগ্যা আইছিলাম ডাক্তার দেহাইতে। হুনলাম এহানে কোনো ডাক্তার নাই। মোরা গরীব মানুষ মোগো হগল জায়গায় মরণ দশা। টাহা নাই এহন কই যামু ডাক্তার দেহাইতে’।
এদিকে কুকুয়ার আজিমপুর বাজারে ১০ শয্যার হাসপাতাল, গাজীপুর ও গুলিশাখালী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিসংখ্যানবিদ, ক্যাশিয়ার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, কার্ডিওগ্রাফার, স্টোর কিপার, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, কম্পাউন্ডারসহ দ্বিতীয় শ্রেণির ৯০টি পদের মধ্যে ৬০টি পদ এবং তৃতীয় শ্রেণির ওয়ার্ডবয়, আয়া, মালী, বাবুর্চি নিরাপত্তা প্রহরী এবং পরিচ্ছন্নকর্মীসহ ৩৩ পদের মধ্যে ১৯টি পদ প্রায় ৩ বছর ধরে খালি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব পদ খালি থাকায় হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অন্যান্য পদের কর্মচারী না থাকায় হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজেও মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার জানান, চিকিৎসক সংকটের কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে এবং জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক চাওয়া হয়েছে। চিকিৎসক পাওয়া গেলে আশা করি এ সংকট থাকবে না।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, আমতলী হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কথা স্বাস্থ্য মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে এবং জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক চাওয়া হয়েছে।