চট্টগ্রাম

৩ লাখের বেশি গরু-মহিষের চামড়া চট্টগ্রামের আড়তে

নগরের আতুরার ডিপোর বিভিন্ন গুদাম, খোলা জায়গা, শেড, বাজার এমনকি সড়কের ওপরও স্তূপ করে রাখা হয়েছে লবণযুক্ত চামড়া। এবার কোরবানির তিন দিনে ২ লাখ ৯৭ হাজার ১৫০টি গরুর এবং ১২ হাজার ২০০ মহিষের চামড়া সংগ্রহ করেছেন ১০৯ জন চামড়ার আড়তদার, ব্যবসায়ী ও বেপারী।

ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৬০০টি। সব মিলে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০টি চামড়া।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহ করা। রোগা গরুর দাগি চামড়া, কাটা-ছেঁড়া চামড়া ছাড়া নগরের সব চামড়াই কিনে নিয়েছি আমরা। এক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত চামড়ার মূল্য হিসাব করেই আমাদের কিনতে হয়েছে।

লবণযুক্ত বিছানো চামড়া প্রায় দেড়-দুই মাস ভালো থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, চলছে বর্ষা মৌসুম। একদিকে নগরে জলাবদ্ধতার শঙ্কা, অন্য দিকে ট্যানারি মালিকদের চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তা।

তবে কোরবানিদাতাদের অনেকে মনে করছেন, এবার ন্যায্য মূল্য পাননি চামড়ার। এতে করে গরিব, মিসকিন ও এতিমখানায় চামড়া বিক্রির টাকা দেওয়াটা নামমাত্র হয়েছে।

একজন চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, এবার কোরবানির দিন বড় গরুর চামড়া ৮০০ টাকা পর্যন্ত কেনা হয়েছে। সর্বনিম্ন ৩০০ টাকায়ও চামড়া কেনা হয়েছে। চামড়া পচনশীল হওয়ায় দ্রুত পরিষ্কার করে লবণ দিতে হয়। এর জন্য দক্ষ-অদক্ষ কর্মীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। অদক্ষ কর্মীদের কারণে লবণ বেশি লাগে, খরচ বেড়ে যায়। সময়ক্ষেপণ হয়। আশার কথা এবার লবণের সংকট ছিল না।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ট্যানারি আছে একটা। তারা চট্টগ্রাম থেকে ৫০ হাজার, বিভিন্ন জেলা থেকে ৫০ হাজার চামড়া কিনে থাকে। বাকি সব চামড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকদের মর্জির ওপর নির্ভর করে।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহ-সভাপতি মো. আবদুল কাদের সর্দার বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাতীয় সম্পদ’ খ্যাত গরু-মহিষ-ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করাটা আমাদের দায়িত্ব। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় আমরা আশানুরূপ চামড়া সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি।

সূত্র জানায়, এবার হাজি মো. আলী (সুন্নিয়া মাদ্রাসা, গাউসিয়া কমিটির চামড়াসহ) সংরক্ষণ করেছেন ৩৩ হাজার গরুর চামড়া। রিফ লেদার সংগ্রহ করেছে ১৪ হাজার গরুর চামড়া। মজিম-রহম আলী-জসিম সংগ্রহ করেছেন ১০ হাজার গরুর চামড়া। দাওয়াতে খাইরের সংগ্রহ ৬ হাজার গরুর চামড়া। সমিতির সভাপতি সাড়ে ৬ হাজার গরুর ও ১ হাজার ছাগলের চামড়া লবণযুক্ত করেছেন। সহ-সভাপতি সংগ্রহ করেছেন ৩ হাজার গরুর ও ২ হাজার মহিষের চামড়া। মো. মাহবুব সওদাগর, মো. শামিম, মহিউদ্দীন ৬ হাজার করে গরুর চামড়া সংরক্ষণ করেছেন। ৫ হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছেন মো. আবদুল জলিল, সমির, মো. সালাউদ্দিন মেম্বার, নাছির। মোহাম্মদ মহিন ও হান্নান সাড়ে ৪ হাজার, পটিয়ার মো. বাদশা ৩ হাজার, গাউসিয়া কমিটি ৪ হাজার ২৫০, আফসার ১ হাজার, রাঙ্গুনিয়ার শাহ আলম ১ হাজার ৫০০, আবু ছৈয়দ ১ হাজার ২০০, দোহাজারীর মনির ৩ হাজার, হাটহাজারী মাদ্রাসা ৬ হাজার, পাহাড়তলীর শফি ৪ হাজার ৫০০, বাঁশখালীর মোহাম্মদ আলী ৫০০, লোহাগাড়ার নূর ইসলাম ১ হাজার, রোশন আলী ১ হাজার ৫০০, কাঞ্চনার রহিম ৮০০ ও জুইনা ১ হাজার গরুর চামড়া সংরক্ষণ করেছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির দিন রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার নষ্ট চামড়া অপসারণ করা হয়েছে নগরের বিভিন্ন স্পট থেকে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্ন বিভাগের লোকজন জানিয়েছেন নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির বর্জ্যের সঙ্গে হাজার খানেক নষ্ট চামড়া অপসারণ করেছেন। হয়তো এসব চামড়ায় রোগাক্রান্তের চিহ্ন ছিল নয়তো অদক্ষ কসাইয়ের কারণে বেশি কাটা ছেঁড়া ছিল। আবার এমনও হতে পারে চামড়ার বর্গফুটের হিসাব বুঝতে না পেরে নতুন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনে এনেছিল বাস্তবে তার চেয়ে অনেক কম ছিল বাজারমূল্য। চসিকের পরিছন্ন বিভাগের কর্মীরা ভোররাতে মালিকবিহীন চামড়া দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কায় অপসারণ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *