৪০ দিন পর তোলা হচ্ছে শাহরিনের মরদেহ
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদে দাফনের ৪০ দিন পর আদালতের নির্দেশনায় এক গৃহবধূর মরদেহ তোলা হচ্ছে। ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি পক্ষের দাবি ‘রিকশায় ওড়না পেঁচিয়ে’ তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের দাবি যৌতুকের টাকা না পেয়ে শাশুড়ি, ননদ ও দেবর মিলে ঘরের মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকাল ১০টার দিকে নগরের বায়েজিদ থানার চালিতাতলী বাজারের মসজিদ সংলগ্ন নুরুল আমিনের পারিবারিক কবরস্থান থেকে এ মরদেহ উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নিহত গৃহবধূর নাম আলফা শাহরিন (২৬)। তিনি বায়েজিদ বোস্তামি থানার চালিতাতলী বাজারের দারোগা বাড়ির মৃত সিরাজুল মোস্তফার ছেলে মো. জাহেদুল মোস্তফার স্ত্রী এবং একই এলাকার নুরুল করিমের মেয়ে।
জানা গেছে, যৌতুকের টাকা না পেয়ে শাশুড়ি, ননদ ও দেবর মিলে শাহরিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে এমন অভিযোগ এনে গত ৬ মে ওই তিনজনকে আসামি করে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ একটি পিটিশন দায়ের করেন ভিকটিমের বাবা নুরুল করিম। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো।
অভিযুক্ত তিন আসামি হলেন আলফা শাহরিনের শাশুড়ি বিবি আয়েশা (৪৮), তার ছেলে সামির (২১) ও মেয়ে আশফিকা (১৯)।
গত ৬ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা বাদী নুরুল করিমের জবানবন্দি গ্রহণের পর পিটিশনটি সংশ্লিষ্ট থানাকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের পর মামলা তদন্তের জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো শাখাকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে গত ৭ মে পাঁচলাইশ থানা ওই পিটিশনটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে অভিযোগ, যৌতুকের টাকা না পেয়ে আসামিরা শাহরিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে। গত ২৭ এপ্রিল বিকাল ৪টা থেকে পরের দিন ২৮ এপ্রিল ভোর সোয়া ৬টার মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
এজাহার অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৭ জুন বায়েজিদ বোস্তামি থানাধীন চালিতাতলী বাজারের দারোগা বাড়ির মৃত সিরাজুল মোস্তফার ছেলে মো. জাহেদুল মোস্তফার সঙ্গে বিয়ে হয় আলফা শাহরিনের। তাদের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান হয় একই বছরের ১৫ আগস্ট। তাদের এক ছেলে সন্তান আছে। বিয়ের পর থেকে বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে স্বামী ও আসামিরা শাহরিনকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে।
নির্যাতনের একপর্যায়ে সুখের আশায় মা এবং আত্মীয়-স্বজন থেকে ৯ লাখ ২১ হাজার টাকা স্বামী এবং শাশুড়িকে এনে দেন শাহরিন। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান এবং বিভিন্নজনের টাকা আত্মসাতের মামলায় চলতি বছরের ৯ এপ্রিল গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি হন শাহরিনের স্বামী জাহেদুল। এ সময় বাবার কাছ থেকে আরও ২০ লাখ টাকা এনে দিতে শাহরিনকে নির্যাতন শুরু করেন আসামিরা।
গত ২৭ এপ্রিল বিকালে ‘রিকশার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে’ শাহরিনের ফাঁস লেগেছে বলে তার বাবার (বাদী) কাছে হোয়াটসঅ্যাপে কল করেন বিবি আয়েশা (শাশুড়ি)। খবর পেয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে বেড রুমের বিছানায় মুমূর্ষ অবস্থায় মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখেন নুরুল আমীন। এরপর মেয়েকে নগরের বেসরকারি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড ডেন্টাল হাসপাতালে নিয়ে যান নুরুল করিম। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে শাহরিনকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। আইসিইউ খালি না থাকায় শাহরিনকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরের বেসরকারি চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৮ এপ্রিল ভোরে আলফা শাহরিনকে মৃত ঘোষণা করে মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকেরা। ওই দিন বেলা ২টায় বাবা নুরুল আমীনের পারিবারিক কবরস্থানে শাহরিনকে দাফন করা হয়। দাফন করার আগে মরদেহের গোসল দেওয়া এক নারী শাহরিনের শরীরে একাধিক ‘আঘাতের চিহ্ন’ দেখে বাদীকে (নুরুল করিম) জানান।
জানতে চাইলে পিবিআই মেট্রো শাখার সহকারী পুলিশ সুপার এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘তদন্তের অংশ হিসেবে ময়নাতদন্তের জন্য আজ (১৩ জুন) কবর থেকে শাহরিনের মরদেহ তোলা হচ্ছে। হত্যা বা আত্মহত্যা— কোনো তত্ত্বই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই কিনারা হবে শাহরিনের মৃত্যু রহস্য।’