চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম ওয়াসার ৯ কোটি টাকা ব্যয় লাইনের ছিদ্র মেরামতে

পানি সরবরাহের পুরোনো পাইপলাইনের ছিদ্র মেরামত করতে করতেই বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার। বছরে হাজার হাজার ছিদ্র মেরামত করলেও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। একদিকের ছিদ্র ঠিক করলে আরেক দিকে ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া পাইপলাইন মেরামতে স্টিলের ক্লামের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে গাছের গুঁড়ি। ফলে কিছুদিন না যেতেই গুঁড়ি পচে আবারও পানির অপচয় হচ্ছে। একইসঙ্গে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি মিশে যাচ্ছে ওয়াসার পানি সরবরাহের পাইপলাইনে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্য অনুসারে, সংস্থাটির আবাসিক গ্রাহক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। চট্টগ্রাম ওয়াসায় উৎপাদিত পানি সরবরাহের জন্য মোট পাইপলাইন রয়েছে ১১০২ কিলোমিটার। এর মধ্যে নতুন পাইপলাইন ৭০০ কিলোমিটার, আর পুরোনো ৪০২ কিলোমিটার। এই পুরোনো পাইপলাইনই চট্টগ্রাম ওয়াসার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর ছিদ্রগুলো ভরাটের ক্ষেত্রেও ত্রুটি আছে। ফলে পানির চাপ বাড়লেই পুরোনো ছিদ্র আবার সচল হওয়ার পাশাপাশি নতুন ছিদ্রও তৈরি হচ্ছে।

প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০টি ছিদ্র মেরামত করছে ওয়াসা। কিন্তু কিছুতেই ছিদ্র বন্ধ হচ্ছে না। এতে পানির অপচয় যেমন হচ্ছে তেমনি পানির সঙ্গে জীবাণু মিশে হচ্ছে দূষিতও।

জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছয় হাজার ছিদ্র মেরামত করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা।

এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ হাজার ২০০টি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ হাজার ৯০০টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ হাজার ৩০০টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ হাজার, ২০১৭-১৮ সালে ৩ হাজার ৯৪২টি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৬৪টি এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৯৯৩টি ছিদ্রে মেরামত করা হয়েছে। আর এই সাত অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা।

চলতি বছরে নগরীর বেশ কয়েকটি জায়গায় ওয়াসার পাইপ ফেটে পানিতে সড়ক ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেক এলাকায় দেখা গেছে, এখনও ওয়াসার পাইপ ফেটে পানি সড়ক ভিজিয়ে নালায় পড়ছে। এতে যেমন পানির অপচয় হচ্ছে তেমনি দুর্ভোগ হচ্ছে পথচারীদের। এর মধ্যে গত ২১ মে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ওয়াসার পাইপ ফেটে পানি কয়েক ফুট ওপরে উঠে যায়। এ সময় পুরো রাস্তায় পানি জমে যায়।

এদিকে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৪ হাজার ৪৯১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্প-২ বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রকল্পে জাইকা ২ হাজার ৮০০ কোটি ৯২ লাখ, বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৬৬৫ কোটি ১৬ লাখ এবং ওয়াসা ২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে।

এই প্রকল্পের আওতায় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ছাড়াও ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার কনভেন্স পাইপলাইন, ৩১৭ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন, ৭০০ কিলোমিটার ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন, দুটি সার্জ ট্যাঙ্ক, ৫৯টি ডিএমএ নির্মাণ, ২ কোটি ৪৮ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার জলাধার নির্মাণ এবং ৩০ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার একটি সুউচ্চ জলাধার নির্মাণ রয়েছে। তার একই প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১। ওই প্রকল্পের অধীনে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার নির্মাণ সমাপ্ত হয় ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালের ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার পাইপ সারানোর কাজে নিয়োজিত একাধিক কর্মচারী জানান, ছিদ্রগুলো ঝালাই করা হচ্ছে না। ছিদ্রের মুখে স্টিলের ক্লামের পরিবর্তে কাঠের গুঁড়ি লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিনের মধ্যেই গাছের গুঁড়িতে পচন ধরে এবং সেটি খসে পড়ে। আর এজন্যই ছিদ্র মেরামতগুলো টেকসই হয় না। মেরামতের কয়েকদিন পর আবার ফুটো হয়ে যায়।

নগরীর আগ্রাবাদ মহুরীপাড়ার বাসিন্দা শওকত হোসেন বলেন, ‘ওয়াসার পানিতে সবসময় দুর্গন্ধ থাকে, পানিতে ময়লা আসে। পানি ফুটিয়ে ফিল্টার করে খাই। তারপরও আমাদের বাসার কারও না কারও ডায়েরিয়া লেগেই থাকে। আশপাশের বাসাতেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি, পানিতে দুর্গন্ধ আসে। বাসা চেঞ্জ করে অন্য এলাকায় নেবো ভাবছি।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পুরোনো পাইপলাইন মাঝে মাঝে ফুটো হয়ে গিয়ে ওয়াসার পানিতে ময়লা মিশে যায়। আর তখনই পানিতে দুর্গন্ধ হয়। জাইকার পরবর্তী প্রকল্পে নতুন পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হলে বাকি যে ৪০২ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে, তা নতুন করে ফেলা হবে।’

ছিদ্র মেরামতে গাছের গুঁড়ি ব্যবহার করা হয় কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্টিলের ক্লাম দিয়েই ফুটো পাইপলাইন মেরামত করা হয়, কাঠের গুঁড়ি ব্যবহারের বিষয়টি সঠিক না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *