শিক্ষা

শিক্ষার্থীদেরকে জীবনে বড় হওয়ার দীক্ষা দিলেন সুফি মিজানুর রহমান

শিক্ষার্থীদেরকে জীবনে বড় হওয়ার দীক্ষা দিয়েছেন পিএইচপি ফ্যামেলির চেয়ারম্যান এবং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সের (ইউআইটিএস) বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান; শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি বলেছেন, মানুষ জীবনে কত বড় হবে সেটা নির্ভর করবে অন্য মানুষের জন্য কত বড় চিন্তা করেছে, সেই কাজের ওপর।

শনিবার রাজধানীর বারিধারায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইউআইটিএস’র আইন বিভাগের নবীনবরণ, বিদায় ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘তোমরা আমার কোমলমতি সন্তান। যারা জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে এখানে এসেছো, আমি তোমাদেরকে দুই/একটা মন্ত্র দেবো। জীবনে কীভাবে বড় হতে হয় এবং জীবনে তুমি কতটুকু বড় হবে সেই কথা বলছি। তোমরা মনে রাখবে, তুমি জীবনে কত বড় হবে সেটা নির্ভর করবে তুমি অন্য মানুষের জন্য কত বড় চিন্তা করেছো, কাজ করেছো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জন্য না, আমরা এসেছি পরের জন্য। আমরা নিজেকে যতবেশি অন্যের জন্য নিয়োজিত করতে পারবো বিধাতা আমাদেরকে তত বড় করবেন, ইনশাল্লাহ। তোমরা যদি জীবনে বড় হতে চাও তাহলে তোমরা মানুষের কথা ভাববে, মানুষের জন্য চিন্তা করবে। যে অসহায় তাকে উঠাবে, যে পথ চলতে পারে না তাকে সাহায্য করবে। তোমরা ক্লাসে এসে যদি দেখো এক বন্ধুর টিফিন নেই তাকে টিফিন খাওয়াবে।’

জীবনে কীভাবে বড় হবে সে বিষয়ে নিজের জীবনের কথা তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সুফি মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘আমি ১০০ টাকা থেকে এখানে এসেছি। আমার জীবনের ইচ্ছে তোমাদেরকে নিয়ে আমি চান্দে যাবো, ইনশাল্লাহ। তোমাদেরকে নিয়ে আমি বিশ্ব জয় করবো, তোমাদেরকে নিয়ে এই সোনার বাংলাকে হীরার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো, ইনশাআল্লাহ।’

জীবনে বড় হতে হলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তোমরা যদি বড় হতে চাও, তবে সময়কে নষ্ট করবে না। ২৪ ঘণ্টা সময়ে খাওয়ার সময় খাবে, ঘুমের সময় ঘুমাবে, পড়ার সময় মনপ্রাণ নিয়ে পড়বে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন থাকবে সমস্ত লাইব্রেরিতে সময় দেবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা। একজন ভালো আইনজীবী কিংবা জজ হতে হলে আইনের সকল খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে। তিনি বলেন, ‘যাদের পড়াশোনার অভ্যাস নেই তাদের জজ হওয়া উচিত না, আইনজীবী হওয়া উচিত না, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

কেবল একজন ভালো বক্তা একজন ভাল আইনজীবী নাও হতে পারেন উল্লেখ করে বিচারপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘আইনের বিষয়গুলো মনে রাখার বিষয়, প্রতিদিন পড়তে হয়, বারবার পড়তে হয়। আমি অনেক আইনজীবীকে দেখেছি তারা মাঠে খুব ভাল বক্তব্য দেন, কিন্তু তারা যখন কোর্টের সামনে আসে তখন যেন ভয়ে ভয়ে থাকেন। তাদের হয়তো মাঠে বক্তব্যে দেওয়ার নলেজ আছে, কিন্তু লিগ্যাল বিষয়ে প্রশ্ন করলে বলতে পারেন না।’

আইনের নতুন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তোমাদের সামনে অনেক সুযোগ আছে। শুধু আইন জানলেই হবে না, আমাদেরকে ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো মানুষ হলে ভাল জজ কিংবা আইনজীবী হতে পারবা।’ বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ১৩০০ বেশি আইন আছে, সবগুলো জানা সম্ভব না। তবে ৩০টি আইন পড়ে সব আইন বুঝতে হবে।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশস্থ মালয়েশিয়ার হাই কমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে নানা চুক্তি রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার চুক্তি আছে। দুই দেশ আগামীকে শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ইউআইটিএস’র অনুষ্ঠানে অতিথি করে সম্মানিত করেছে উল্লেখ করে সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পড়াশোনার বিকল্প নেই। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, এই চার/পাঁচ বছরের জার্নিতে লেখাপড়ার পাশাপাশি, অর্থাৎ শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষারও প্রয়োজন। দীক্ষা যদি না থাকে তাহলে শিক্ষা কোনো কাজে লাগবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউআইটিএস’র বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের সদস্য মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, আমার আব্বা সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের স্বপ্ন ইউআইটিএস। তিনি স্বপ্ন দেখেন- ইউআইটিএস’র মাধ্যমে যারা পড়ালেখা করবেন, তারা শিক্ষার সাথে দীক্ষা, বিদ্যার সাথে বিনয়, কর্মের সাথে নিষ্ঠা এবং জীবনের সাথে প্রেম-বোধ-আচার এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আপনারা সম্মৃদ্ধ হবেন। সেটা যদি হয় তখনই আমার আব্বার স্বপ্ন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরেক বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউআইটিএস’র বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের সদস্য মোহাম্মদ আকতার পারভেজ বলেন, আপনারা যেখানে পড়ছেন সেই ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, তিনি শুধু এই ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতাই নন, তিনি আরও ২৭টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর আপনারাদের চাকরিতে যোগ দেওয়ার কোনো সমস্যা হবে না। অনেকেই এই ইউনিভার্সিটিতে পড়া শেষে এখন কাজ করছেন।

নতুন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আলহাজ্ব সূফি মিজানুর রহমানের বক্তব্য শুনবেন, ইউটিউবে অনেক ভিডিও বক্তব্য আছে দেখার চেষ্টা করবেন। উনার সংস্পর্শে এসে বক্তব্য শুনতে পারলে তো আপনারা আরও সৌভাগ্যবান। আপনারা উনার জীবনের কিছু একটা ফলো করতে পারলে আপনারাদের জীবন সাকসেসফুল হয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে ইউআইটিএস’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু হাসান ভূইয়ার সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের উপদেষ্টা কে এম সাইফুল ইসলাম, আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেহনুমা চৌধুরীসহ নতুন ও বিদায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনেকে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদেরকে বরণ, প্রবীণ শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিক বিদায় এবং একাডেমিক ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল এবং ক্লাসে শতভাগ উপস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *