চট্টগ্রাম

জলাবদ্ধতা ইস্যুতে সমন্বয়ের অভাব মিডিয়ার তৈরি

জলাবদ্ধতা ইস্যুতে সমন্বয়ের অভাব মিডিয়ার তৈরি বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সম্প্রতি নগরের টাইগারপাসে চসিক কার্যালয়ে ‘নগরপিতার তিন বছর’ ঘিরে নেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জলাবদ্ধতার ইস্যুতে সমন্বয় প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘সমন্বয় আছে। সমন্বয় ভালোভাবেই চলছে। সমন্বয় নাই, সমন্বয় নাই বলে বলে এগুলো হচ্ছে মিডিয়ার তৈরি করা। সমন্বয় নাই কোথায়? কথাটা হচ্ছে জলাবদ্ধতায় পানি উঠেছে। সেজন্য সমন্বয় নাই, সমন্বয় নাই বললে তো হবে না। এতো বড় মেগা প্রজেক্ট, এটার জন্য সময়ের প্রয়োজন। কাজ শেষ না হলে সুফল কীভাবে পাবেন?’

জলাবদ্ধতা ইস্যুতে মেয়র আরো বলেন, ‘এই বর্ষায় যদি জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারে তাহলে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি এই বছরেও থাকবে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার পরেও যদি ভোগান্তি থাকে তাহলে বলা যাবে এই প্রকল্পের কোনো সুফল আসেনি। তার আগে প্রকল্পের সুফল আসেনি বলা যাবে না। জনগণ যেখানে ভোগান্তিতে পড়েছে। আমিও জনগণের একজন। তারা যেভাবে সাফার করেছে, আমাকেও সাফার করতে হয়েছে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিন বছর পার করতে যাচ্ছেন মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল। ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি চসিক মেয়র হিসেবে শপথ নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন।

তিন বছরে চসিকের অর্জন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে হাঁটছেন, দেখছেন না? যদি দেখেন যে এখানে কোনো উন্নয়ন হয়নি, তাহলে হয়নি। আর যদি দেখেন যে হয়েছে তাহলে হয়েছে। জনগণই মূল্যায়ন করবে আগে কেমন ছিল আর এখন কেমন পরিবর্তন হয়েছে?’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেক। চট্টগ্রামকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এখানে এমিউজম্যান্ট পার্ক, প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শিশুদের জন্য কিডস জোন, খেলার মাঠ করার পরিকল্পনা আছে। অলরেডি আমরা নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এছাড়া সমগ্র চট্টগ্রাম শহরকে বিউটিফিকেশনের আওতায় আনা হবে।’

নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৭ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম। এর মধ্যে অগ্রাধিকারের প্রথমেই ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট নিরসন, মশক নিধন, খাল, নালা ও ফুটপাত থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ও রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত এলইডি লাইট নিশ্চিত করা।

কিন্তু এতোসব প্রতিশ্রুতির ভিড়ে গত তিন বছরে বর্তমান মেয়রের দৃশ্যমান কার্যক্রমের মধ্যে ছিল কেবল অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া শুরু এবং উচ্ছেদ অভিযান। যদিও তিন বছরের শেষ সময়ে এসে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ অভিযানটি চালানো হয়েছে।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রথমেই থাকা জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়ার দায়ভার পড়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ঘাড়ে। গত দুই বছরের বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছিলেন নগরবাসী। পানিবন্দিও থাকতে হয়েছে অনেককে। এমনকি মেয়রের বাড়িতেও পানি উঠেছে। ওই সময় মেয়র দাবি করেন, সিডিএর ব্যর্থতার জন্য নগরবাসী কষ্ট পাচ্ছেন। কাজ দ্রুত করতে সিডিএকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে প্রথম বছর ছাড়া গেল দুই বছরে চসিকে ঘটেছে একের পর এক প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার ঘটনা। এর মধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালকের ওপর ঠিকাদারদের হামলা। মশার ওষুধ কেনায় অনিয়মের খোঁজ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এর আগের দুই বছর নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিসহ সাতটি সূচকে স্থানীয় সরকার বিভাগের মূল্যায়নে পিছিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০টি সংস্থার মধ্যে ১৪তম ছিল চট্টগ্রাম। সর্বশেষ অর্থবছরে (২০২১-২২) আরও চার ধাপ পিছিয়ে যায় চট্টগ্রাম। অর্থাৎ ২০টির মধ্যে ১৮তম হয় চসিকের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *