রোজা শুরুর আগে যা যা করবেন
কোটি মুসলিমের প্রাণের স্পন্দন, হৃদয়ের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) রোজার মাস শুরু হওয়ার আগেই এর প্রস্তুতি নিতেন। তাকে অনুসরণ করে প্রতিটি রোজা প্রত্যাশীদের নিজের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো।
রজব মাস (শাবান মাসের আগের মাস) এলেই মহানবী দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান- ওয়া বাল্লিগনা রমাজান। ’
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজানে পৌঁছে দিন।
শাবান মাস (রমজান মাসের আগের মাস) থেকে তিনি আরও অধিক ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন যাতে করে মহামূল্যবান রমজান থেকে সর্বোচ্চ ফায়দা নিতে পারেন। তাই আমাদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে, নিতে হবে বিশেষ পরিকল্পনা। সে লক্ষ্যে পবিত্র রমজানের আগে আমাদের করণীয় হলো—
এক. বিশেষ কোনো সফর বা বড় ধরনের কোনো কাজ থাকলে রমজানের আগে বাড়তি শ্রম দিয়ে তা সেরে ফেলা।
দুই. রোজার জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা রোজার আগেই শেষ করা।
তিন. রমজানটা আপনি কিভাবে কাটাবেন- সেজন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হোন ও একটি পরিকল্পনা করুন। এ পরিকল্পনা আপনাকে দ্বীনের পথে অগ্রসর হতে সহায়তা করবে। রমজানের পরিকল্পনায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো রাখা যেতে পারে—
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত : রমজান মাসে আপনি কতটুকু কোরআন তেলাওয়াত করতে চান তা আপনার শক্তি, সামর্থ্য ও সময় বিবেচনায় রাখুন।
কোরআন অধ্যয়ন : পবিত্র রমজানে কোরআন নাজিল হয়েছে মানুষের হেদায়েতের জন্য। তাই অর্থ ব্যাখ্যাসহ কোরআন বোঝা একান্ত জরুরি। এ মাসে অবশ্যই একটা উল্লেখযোগ্য সময় আল্লাহর কালাম বোঝার জন্য বরাদ্দ করুন।
সহিহ তেলাওয়াত শিক্ষা : সহিহ তেলাওয়াত বিশুদ্ধ নামাজের শর্ত। এ পবিত্র রমজানে আপনি মহল্লার মসজিদে রমজান উপলক্ষে আয়োজিত কোরআন প্রশিক্ষণ ক্লাসে সব জড়তা ঝেড়ে ফেলে শামিল হোন। অথবা একজন ভালো কারীর কাছে ব্যক্তিগতভাবে বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের প্রশিক্ষণ নিন। নিবিড় প্রচেষ্টা চালালে এক মাসেই আপনি বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিক্ষায় একটা ন্যূনতম মানে চলে আসতে পারবেন। যারা জানেন তারাও এ মহৎ কর্মে অংশ নিলে তা আপনাদের তেলাওয়াতের মানকে আরও সুন্দর করবে।
তাফসির, হাদিস, ইসলামি সাহিত্য ক্রয় : এ মাসে বিভিন্ন ইসলামি প্রকাশনা তাদের সাহিত্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমিশন দেয়। আপনি সুযোগটি গ্রহণ করুন। পবিত্র কোরআনের পূর্ণাঙ্গ তাফসির, সিহাহ সিত্তার হাদিস সমগ্র ও ইসলামি আদর্শের মৌলিক গ্রন্থাবলী কেনার জন্য আপনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করুন এবং সম্ভব হলে রমজানের আগেই তা কিনে ফেলুন। এ বইগুলো আপনার জ্ঞানকে করবে সমৃদ্ধ, চরিত্রকে করবে মার্জিত। একই সাথে এ বইগুলো আপনার ব্যক্তিগত পাঠাগারে শ্রীবৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবার পরিজনের মধ্যে দ্বীনের সৌরভ ছড়িয়ে দিয়ে আপনার জন্য সাদকায়ে জারিয়ার ব্যবস্থা করবে।
নফল ইবাদত : তারাবি, নফল ইবাদত ও দান সদকার ব্যাপারেও আপনি পরিকল্পনা নিতে পারেন। এ পরিকল্পনা আপনাকে অলসতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। আপনি জাকাতের দাতা হলে জাকাত হিসাব-নিকাশ ও বিলিবণ্টনের কাজটি এ মাসে সেরে নিতে পারেন। এ মাসের একটি বিশেষ ফজিলত হলো এ মাসে একটি ফরজ ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান এবং একটি নফল একটি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব। তাই এ মাসে এমন একটি অবারিত সুযোগ গ্রহণে আমাদের উৎসাহী হওয়া একান্ত জরুরি। সেহরির কারণে এ মাসে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা খুবই সহজ। কিন্তু অনেকেই এ সময়ে রেডিও-টিভির সেহেরি অনুষ্ঠান শোনা ও দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে ইসলামি জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে, সওয়াবও হবে কিন্তু হাদিস অনুযায়ী আপনি বেশি লাভবান হবেন যদি এ সময়টা আপনি নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দোয়া-দরুদ পাঠ ও আল্লাহর দরবারে গোনাহ মাফ, তওবা ও কান্নাকাটি করে কাটান।
ইতেকাফ : রমজানে ইতেকাফ করতে চাইলে আপনাকে তারও দৃঢ় পরিকল্পনা করতে হবে এবং সে নেক ইচ্ছাকে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পারিবারিক কাজগুলোও আপনাকে আগেই শেষ করতে হবে।
পারিবারিক সংশোধন : রমজানে আপনি পারিবারিক সংশোধনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারেন। এ জন্য আপনি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় তালিমের জন্য বেছে নিন। এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের মতামত নিলে সবার পক্ষ থেকে সাড়া পাবেন। কারণ পবিত্র রমজানে মানুষের মধ্যে দ্বীনের কথা শোনার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
রমজানের পবিত্রতা রক্ষা : রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় বিশেষ পরিকল্পনা নিন। কোনো বদ অভ্যাস থাকলে তা ছাড়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ যাতে রোজাহীন না থাকে তার জন্য রমজানের আগেই তাদের সতর্ক করুন। আপনার পয়সায় আপনার ঘরে দিনের বেলায় পবিত্র রমজানে শিশু ও অক্ষম বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ছাড়া অন্যের অন্ন সংস্থানের সব পথ বন্ধ করে দিন। এ ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিত্ব, কঠোরতা ও দরদভরা উপদেশ সবাইকে রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে। এ ব্যাপারে রমজানের আগেই যাথার্থ্য পরিবেশ তৈরি করুন। মনে রাখবেন বকাঝকা ও রাগারাগি আপনার মহৎ ইচ্ছাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। সমাজে আপনার দায়িত্বের পরিধি যত বেশি, রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় আপনার কর্তব্যও তত বেশি। রমজানের আগে গৃহীত পরিকল্পনা প্রতিদিন সম্ভব না হলেও অন্তত সপ্তাহে এক দিন আপনি পর্যালোচনা করুন।
কোথাও গাফলতি থাকলে তা দূর করুন। আপনার নেক পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের ঐকান্তিকতা ও নিষ্ঠা একান্ত জরুরি। খালেসভাবে আল্লাহর পথে আগাতে চাইলে আল্লাহ অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবেন।