চট্টগ্রামবিনোদন

তারুণ্যকে জাগিয়ে বাঁচাতে হবে দেশীয় সংস্কৃতি

চট্টগ্রামে সংস্কৃতি চর্চার সীমাবদ্ধতা, উত্তরণের উপায় নিয়ে আমাদের এখন থেকেই ভাবতে হবে। অভিযোগ থাকবেই। এসব উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সত্যিকারের সাহিত্য ও সংস্কৃতিবান্ধব চট্টগ্রাম নগরী রেখে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। দেশীয় সংস্কৃতি বাঁচাতে তারুণ্যকে জাগাতে হবে।

প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে দৈনিক পূর্বকোণের বিশেষ ক্রোড়পত্রের জন্য আয়োজিত ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগরী: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে আলোচকরা এসব কথা বলেন। আলোচনার সপ্তম পর্বে ‘চট্টগ্রামের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির সীমাবদ্ধতা’ নিয়ে মতামত দেন সংস্কৃতিজন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার বলেন, চট্টগ্রামের সাহিত্য সাধনায় যারা আছেন তারা আসলে বাংলা ভাষারই সাহিত্য সাধক। এখানে আলাদা কোনো চট্টগ্রামের সাহিত্য নেই বলেই আমি মনে করি। চট্টগ্রামের সাহিত্য হচ্ছে আগের সেই লোকছড়া, লোকগান। যার মধ্যে এখনও সীমাবদ্ধ। এরমধ্যে চট্টগ্রামের আলাদা কোনো সংস্কৃতি দাঁড়ায়নি।

তিনি বলেন, এখন পরিবারগুলোর মধ্যে সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা চলে এসেছে। ফলে মূল জায়গায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যদি সংস্কৃতির চর্চাই না হয় তাহলে প্রচার কিভাবে হবে। চট্টগ্রামের সংস্কৃতি আলাদা কিছু নয়। এটি বাংলাদেশেরই সংস্কৃতি। আগে শিল্প চর্চায় আসতে হবে। তাহলেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ তথা চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা যাবে।

থিয়েটার ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, বিশাল বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু তা কতটুকু থিয়েটার উপযোগী হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। সরকারের দোষ দেওয়া যায় না। কারণ তারা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। তবে সরকারকে এটাও ভাবতে হবে, যারা এই কাজটা করছে তাদের সামর্থ্য কতটুকু। এ বিষয়ে তাদের জ্ঞান কতটুকু।

তিনি বলেন, আমরা যে সংস্কৃতি চর্চা করি, সেটা কেন করি, তার উদ্দেশ্য কী, এটা যদি জানা থাকে, তাহলে আমি অবকাঠামো বা অন্য কী পেলাম আর কী পেলাম না, সেটা কোন প্রভাব ফেলে না। সংস্কৃতি চর্চার জন্য চট্টগ্রাম একদম উর্বর জায়গা ছিল, এখনও হতে পারে। কারণ চট্টগ্রামে তারুণ্যের আধিক্য ছিল। এখনও তারুণ্যের আধিক্য আছে। সেটাকে আমাদের জাগাতে হবে।

চট্টগ্রাম ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সভাপতি শৈবাল চৌধুরী বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা ও অবকাঠামোগত সুবিধার অভাবে চট্টগ্রামে ভালো মানের ফিল্ম তৈরি হচ্ছে না। কেউ তৈরি করলেও তা ঢাকায় প্রদর্শন করা যায় না। এ দীনতা দূর করতে ফিল্ম তৈরিতে ধনীদের এগিয়ে আসতে হবে। বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে সপ্তাহে অন্তত ত্রিশ মিনিট হলেও আমাদের ফিল্ম দেখানো দরকার।

নাট্যকার ও নির্দেশক রবিউল আলম বলেন, সারাদেশে সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব চলছে। তবে চট্টগ্রামে এটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমরা আনুষ্ঠানিকতাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। মান নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। নাটকের জন্য একটা জেনারেশন শূন্য থেকে গেছে। রাষ্ট্রের কাজগুলো সংস্কৃতির স্বপক্ষে যাচ্ছে না। অনেকে হাল ধরার চেষ্টা করছে। এ জন্য সৃজনশীল শিল্পী দরকার।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস বলেন, চট্টগ্রামে প্রকাশনা শিল্পের গৌরব ষাটের বা সত্তরের পরে ম্রিয়মাণ ছিল। তবে গত এক দশকে সেটার উন্নতি হয়েছে। এর ফলে লেখকরা অনেক বেশি বই প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছে। প্রকৃত লেখকরা সম্মানিত হচ্ছে। মূল্যায়ন পাচ্ছে। প্রকাশনার যে উপস্থাপনা- ঢাকার তুলনায় তা চট্টগ্রামে কম হচ্ছে না।

জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রেয়সী রায় বলেন, চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটা শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। আমরা অল্প কিছুদিন শিখেই শিল্পী হয়ে যাচ্ছি। প্রশিক্ষক হয়ে যাচ্ছি। এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। শিল্পী তো বানানো যায় না। শিল্পী তৈরি করতে হবে। শিক্ষার এই জায়গাটা একেবারে ঘর থেকে আসতে হয়।

লিটল ম্যাগাজিন ঘুড়ির সাহিত্য সম্পাদক আসমা বীথি বলেন, প্রকাশনাটা বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিনের জন্য আলাদা চত্বর তো দূরের বিষয়, স্টল পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। অতীতের ধারাবাহিকতায় এখন আর ভালো কাগজে লিটল ম্যাগাজিন বের হচ্ছে না। আমি মনে করি লেখকদের সহজ জনপ্রিয়তা উপেক্ষা করে ‘সম্মান’ কে প্রধান্য দিতে হবে।

নাট্যজন শিশির দত্তের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও মতামত দেন নাট্যকার ও নির্দেশক সুমন টিংকু, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি চট্টগ্রামের আবৃত্তি শিল্পী ও প্রশিক্ষক মিলি চৌধুরী, নাট্যশিল্পী ও আবৃত্তি শিল্পী কঙ্কন দাশ। বক্তব্য রাখেন দৈনিক পূর্বকোণের প্রধান প্রতিবেদক সাইফুল আলম। সমাপনী বক্তব্য দেন দৈনিক পূর্বকোণের সিটি এডিটর নওশের আলী খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *