২০৪১ সালের মধ্যে বিজিবিও হবে বিশ্বমানের স্মার্ট সীমান্ত বাহিনী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্ত বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেজন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১ আমরা প্রণয়ন করেছি। যেভাবে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ করতে চাই, সেরকম বিজিবিও হবে স্মার্ট বাহিনী।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২৩ এর আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আজ (সোমবার) সকাল সাড়ে ৯টায় বিজিবি সদর দপ্তরের বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে তিনি আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।
বিজিবি দিবসের এ অনুষ্ঠানে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭২ বিজিবি সদস্যকে পদক প্রদান করেন।
বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি দক্ষ ও শক্তিশালী আধুনিক ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে বিজিবি গড়ে উঠেছে। জল, স্থল ও আকাশ পথেও দায়িত্ব পালনে এখন সক্ষম বিজিবি। আমরা দুটো হেলিকপ্টারও কিনে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিজিবির ওপর। সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান, মাদক, নারী ও শিশু পাচার বন্ধসহ নানা কাজ অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে করে যাচ্ছে বিজিবি। দেশ রক্ষায় সদা জাগ্রত সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি।
তিনি আরও বলেন, দেশের আভ্যন্তরীণ যেকোনো সমস্যায় আগুন সন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ঘটনা ঘটেছে। বিজিবির সদস্যরা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। জানমাল রক্ষায় সব সময় ভূমিকা রাখে। বিজিবি জাতির আস্থা বিশ্বাস অর্জন করেছে।
বিজিবির বর্ডার পোস্টও (পদ) বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবির পাঁচজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে পাঁচটি রিজিয়নে বিভক্ত করা হয়েছে। বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন ইউনিট, সেক্টর রিজিয়ন সৃষ্টির ফলে কমান্ড লেভেলে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে দায়িত্বপূর্ণ এলাকা কমে যাওয়ায় সুষ্ঠু সুন্দরভারে সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত অপরাধ দমন ও সীমান্তবর্তী মানুষের জানমাল রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারছে। আমরাই প্রথম নারীদের বিজিবিতে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ দিয়েছি। বিজিবির পোশাক পরিবর্তন করেছি।
আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে বিজিবিতে সৈনিক পদে মোট ৩৫ হাজার ৫১৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। ৫৫ হাজার ১১৭ জনকে নানাভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আমরাই প্রথম নারীদের বিজিবিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমাদের নারীরা এখন অনেক স্মার্ট। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯৯৬ নারী বিজিবিতে সৈনিক পদে যোগ দিয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে আরও ১৫ হাজার পদ সৃষ্টির পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
তিনি বলেন, বিজিবির পোশাক পরিবর্তন করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে যেন বিজিবি উন্নত হয় সেজন্য বিভিন্ন পদ সৃষ্টি, কল্যাণমুখি পদক্ষেপ, নতুন র্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন, যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভাগীয় অফিসার পদে পদোন্নতি, সীমান্ত ভাতা প্রদান, জুনিয়র কর্মকর্তা, হাবিলদার পদের বিজিবি সদস্যদের বেতন স্কেল উচ্চতরে উন্নীত করা হয়েছে। দুই মাসের বাৎসরিক ছুটি ও বেতন অগ্রিম বেতন প্রদান, পারিবারিক রেশন, তিন বছরের নিচে সন্তানদের পূর্ণ স্কেল রেশন প্রদান, যাদের প্রতিবন্ধী সন্তান তাদের জন্যও আলাদা রেশনের ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ, চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে। টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যদের খেলাধুলার জন্য ময়মনসিংহের শেখ কামাল স্টেডিয়ামকে জিমসহ একটি ইনডোর স্টেডিয়াম করা হয়েছে।
নিশ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট, ডিজিটাল সার্ভিল্যান্স সিস্টেম অ্যান্ড টেকনিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও শাহপরীর দ্বীপ বিওপি’সহ আরও দুটি স্থানে রাডার স্থাপন করা হয়েছে।
পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১,০৩৬ কি.মি.সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩১৭ কি.মি. সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দুর্গম প্রত্যন্ত ও পার্বত্য অঞ্চলের জনবিচ্ছিন্ন ৫০টি বিওপিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্ভর ভি-স্যাট প্রযুক্তি স্থাপন করে আইপি টেলিফোনের মাধ্যমে বিওপি হতে বিজিবি সদর দপ্তর ও অন্যান্য স্থানে যোগাযোগসহ বিজিবি সদস্যরা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছে।
সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান রোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধসহ বিভিন্ন আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন এবং সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বিজিবির দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা, দেশগঠন ও জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে বিজিবির পেশাদারিত্ব সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বিজিবির মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ বিশেষ করে নারী সৈনিকদের ড্রিল দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন। তিনি বিজিবিতে বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান।
ভাষণ প্রদান শেষে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ‘প্রেরণা’ এর শুভ উদ্বোধন করেন। এরপর ডগ মার্চ, ট্রিক ড্রিল, বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রা এবং বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ শেখ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সম্মিলিত প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।