নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
দীর্ঘ ২০ বছর পর অপেক্ষার পর কমিটি পেয়েছিল চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। কমিটি পেয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্পন্ন করে কেন্দ্রে ঘোষিত নানা র্কমসূচিও।
ডাকঢোল পিটিয়ে করেছে নগরের প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলন। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও।
কিন্তু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ‘পকেট’ কমিটিতেই শেষ হলো সকল ঐক্য। দু’জন মিলে রাতের আধারে বির্তকিতদের নিয়ে সাতটি থানা ও ১২ ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করতেই দ্বন্দ্বের শুরু। প্রতিবাদ করে বসেন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ১২ নেতা, বিবৃতি পাঠান গণমাধ্যমে। তাঁদের সেই প্রতিবাদ পৌঁছে গেছে কেন্দ্র পর্যন্ত।
এখন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নবঘোষিত কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। ৭ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১৮ মার্চ) কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদকের সই করা এক চিঠিতে এই নিদের্শনা দেওয়া হয়।
গত ১৪ মার্চ নগরের সাত থানা ও ১২টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসব কমিটির অনুমোদন দেন। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১২ নেতা এ গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। করেন সাংবাদ সম্মেলনও। সেখানে তারা ইয়াবা ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, সরকারবিরোধী ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি ঘোষিত হয়েছে বলে দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলন দাবি করা হয়, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজস্ব নেতা-কর্মী সৃষ্টির জন্য পুরানো ত্যাগী কর্মীদের স্বপ্নকে গলাটিপে হত্যা করেছেন। কমিটিতে অস্ত্র, খুন, মাদক মামলার আসামিকে রাখা হয়েছে। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদেরও স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। এতে অদৃশ্য শক্তির ইন্ধনে হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহম্মাদ সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অগঠনতান্ত্রিক কমিটি দেওয়ার কারণে কারণ দর্শাতে বলেছে কেন্দ্র। একইভাবে আমরা সাংবাদিক সম্মেলন করায় আমাদেরও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, কমিটির সকলের সঙ্গে সমন্বয় করেই কমিটি ঘোষণার নির্দেশনা ছিল কেন্দ্রীয় কমিটির। কিন্তু চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারো সঙ্গে কোনো সমন্বয় না করেই নগরের সাত থানা ও ১২টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেছেন। এটা সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। এজন্য ৭ দিনের মধ্যে দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। এরমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতি গাজী মেজবাউল হক সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু নির্দেশনা প্রদান করেছেন। একইভাবে কমিটি ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদানকারী ১২ জনকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত না করে গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাদের (১২ জন) কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
নগর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু বাংলানিউজকে বলেন, নগর সেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি গঠনের পরপরই আমরা সদস্য সংগ্রহ করছি, এরপর প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে সম্মেলন করেছি, এরপর আসল জাতীয় নিবার্চন। সম্মেলনের ১১ মাস পর আমরা কমিটি দিয়েছি। আমাদের কমিটির প্রায় ২ বছর পার হয়ে যাচ্ছে । যারা জাতীয় নিবার্চনে কাজ করেছে দলের জন্য নিবেদিত তারাই কমিটিতে স্থান পেয়েছে। কমিটি নিয়ে কেন্দ্র জানতে চেয়েছে আমরা সেটারও জবাব দিব।
২০২২ সালের ৯ মার্চ দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি ও আজিজুর রহমান আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০ সদস্যের নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।