জাতীয়

বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা

প্রতি বছরের বন্যা বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছে, বিশেষ করে গ্রামীণ নদীর তীরের সম্প্রদায়ের গোষ্ঠীদের। এই সম্প্রদায়গুলো বন্যা ও নদী ভাঙন রোধে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কিছু শক্তি কৌশল তৈরি করেছে, কিন্তু ক্রমবর্ধমান বিপর্যয় ও ভূমি চাপের মুখে এই কৌশলগুলোর কার্যকারিতা দিন দিন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের ৩৫টি সম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতার মূল্যায়নের ওপরে ভিত্তি করে সম্প্রতি গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জ একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে।

ক্রমবর্ধমান জলবায়ু-সম্পর্কিত ঝুঁকির সঙ্গে অভিযোজন সীমার প্রমাণসহ বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করে দেখা যায় যে, বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যার দুর্যোগ ও জলবায়ু-সম্পর্কিত ঝুঁকি বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করছে। ফলে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানগুলোতে ক্রমবর্ধমান অস্তিত্বের ঝুঁকি মোকাবিলায় দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে রূপান্তরমূলক পদ্ধতির দিকে একটি ধাপের পরিবর্তন প্রয়োজন।

২০২২ সালে ইইয়াসা ইয়ং সাইন্টিস্টস সামার প্রোগ্রামে (ইয়সসপ) প্রাক্তন ছাত্রদের সমীক্ষা, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অ্যামেলি পাসজকোস্কি, আইআইএএসএ অ্যাডভান্সিং সিস্টেমস অ্যানালাইসিস প্রোগ্রামে সিস্টেমিক রিস্ক অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স রিসার্চ গ্রুপ থেকে রেইনহার্ড মেখলার এবং ফিন লরিয়েনের সহযোগিতায় এবং প্রাক্তন ইয়সসপ বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান জিম হলের অনুসন্ধানে একটি হট স্পট উঠে আছে- আর তা হল বাংলাদেশ।

যদিও বাংলাদেশের সম্প্রদায়গুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে স্থিতিস্থাপকতার কৌশলগুলো তৈরি করেছে, যা শোষণকারী, অভিযোজিত এবং রূপান্তরমূলক পদ্ধতির সংমিশ্রণে স্থায়িত্ব পেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমবর্ধমান গুরুতর ঝুঁকিগুলো দুর্বল সম্প্রদায়গুলোকে হুমকির সম্মুখীন করছে এবং তাদেরকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।

যদিও ক্রমবর্ধমান বিপদ এবং ভূমির জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করার জন্য এই জাতীয় কৌশলগুলো যথেষ্ট কিনা তা স্পষ্ট নয়, হট স্পট অবস্থানগুলোতে পরিবর্তনের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সম্প্রদায়ের ক্ষমতা বোঝার ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন।

ইয়সসপের গবেষণায় ও জুরিখ বন্যা স্থিতিস্থাপক জোটের অংশীদারদের দ্বারা সৃষ্ট সিস্টেম-ভিত্তিক ফ্লাড রেজিলিয়েন্স মেজারমেন্ট ফর কমিউনিটিস (এফআরএমছি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নদীমাতৃক বাংলাদেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত এবং উন্মুক্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে ৩৫টি জনগোষ্ঠী বন্যা ও নদী ভাঙনের মতো ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে।

অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করার প্রচেষ্টাগুলো মূলত বন্যা বাধা এবং বালির ব্যাগের ব্যবহার, বসতবাড়ি উত্থাপন, বসতবাড়ির চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ এবং স্থানীয়ভাবে বন্যার পানি সরিয়ে নেয়া সহ একটি পরিবর্তিত জলবায়ুতে অভিযোজিত হওয়ার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।

তা সত্ত্বেও, পরিবর্তনমূলক পদক্ষেপ বিবেচনা করার কিছু সম্ভাবনাও চিহ্নিত করা হয়েছে, যেমন উন্নত সম্প্রদায় সংগঠন, সহযোগিতামূলক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এবং বন্যার সময় পরিকল্পিত অস্থায়ী দেশত্যাগ যেন নদীমাতৃক বাংলাদেশে গ্রামীণ স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য চলমান সম্প্রদায়-কেন্দ্রিক প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্য করা যায়।

আইআইএসএ-র সিস্টেমিক রিস্ক অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স রিসার্চ গ্রুপের প্রধান মেকলার বলেন, ক্রমবর্ধমান জলবায়ু হুমকি এবং এই অঞ্চলে দ্রুত ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মুখে, জলবায়ু ঝুঁকি বাংলাদেশের গ্রামীণ সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অন্যান্য দুর্বল অঞ্চল এবং দেশের অনেক সম্প্রদায়ের জন্য অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ তৈরি করে৷

সম্প্রদায়ের প্রাক্টিশনার্সদের সহযোগিতায় আমাদের গবেষণা থেকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, পরিবর্তনমূলক সমাধানগুলোকে আরো ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে যেন এই সম্প্রদায়গুলো সামনের আরো বড় ঝড়, বিপর্যয় মোকাবিলা করতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *