জাতীয়

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা টানা হরতাল-অবরোধে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। সমপ্রতি জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানায়, ২৮ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর (২৪ দিন) পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক সারা দেশে মোট ১৯৭টি (যানবাহন ও স্থাপনাসহ) আগুনের সংবাদ পাওয়া গেছে। সংস্থাটি আমার সংবাদকে জানিছে, গত ২৪ দিনে গড়ে সাতটি যানবাহন ও স্থাপনায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

জ্বালানির দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ, পরিবহন, মজুত রাখা হরতাল অবরোধে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যদি এসব স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সাধারণত ‘কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন’ বা কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু সমপ্রতি পেট্রোবাংলা, বিপিসি এবং বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানির স্থাপনার নিরাপত্তা নজরদারি করতে তিনজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর আগে বিএনপি-জামায়াত এক দফার দাবি আদায়ে হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। চলমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন। যার ফলে জ্বালানি বিভাগের পাশাপাশি অন্যান্য স্থাপনায়ও নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কেপিআই প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা একটি নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কিন্তু এরপরও চলমান হরতাল-অবরোধের মধ্যে যাতে কোনোভাবেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য নিরাপত্তা জোরদার-বিষয়ক এক বৈঠক করা হয়েছে। ওই বৈঠকে তিনজন কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

প্রতিদিনের চিত্র সরকারের ঊর্ধ্বতনদের জানানোর নির্দেশ দিয়ে একটি আদেশও জারি করা হয়েছে। জানা গেছে, জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হেসেনকে পেট্রোবাংলা ও এর আওতাধীন কোম্পানি, যুগ্ম সচিব এ কে এম মিজানুর রহমানকে বিপিসি এবং বিপিসির আওতাধীন কোম্পানি ও পেট্রোবাংলার পরিচালক শাহিনুর রহমানকে আইওসির কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা নজরদারি করার নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। রাজপথে থাকা সরকারবিরোধী শিবির গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছে। মাঠে সরব না থাকলেও একের পর চোরাগুপ্ত হামলার ঘটে যাচ্ছে। কোথাও গাড়িতে আগুন আবার কোথাও ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাচ্ছে এসব দুর্বৃত্ত। চোরাগুপ্তা এসব হামলা মোকাবিলা করতে মাঠে তৎপর পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। এমন পরিস্থিতির কারণে বিপিসির তরফ থেকে পেট্রোলপাম্পগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে খোলাবাজারে পেট্রোল বিক্রি না করার নির্দেশ দেয়া হয়।

এদিকে অবরোধ ও হরতালের নামে চলমান নাশকতার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে কেউ যেন পেট্রোলপাম্প ও সিএনজি স্টেশনে অগ্নিসংযোগ করতে না পারে এবং পেট্রোলপাম্প থেকে পেট্রোল বা জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে নাশকতা করতে না পারে সেই লক্ষ্যে ১০ নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এর মধ্যে বাসাবাড়ি ও কলকারখানার জেনারেটরের জন্য জ্বালানি সংগ্রহে থানার ওসির ছাড়পত্র নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে— পেট্রোলপাম্প ও সিএনজি স্টেশনে পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানো। সহকারী পুলিশ কমিশনাররা এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে অবস্থিত পেট্রোলপাম্প ও সিএনজি স্টেশনসমূহ সরেজমিন পরিদর্শন করে সার্বিক নিরাপত্তা তদারকি করবেন এবং কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। প্রত্যেক অপরাধ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে পেট্রোলপাম্প ও সিএনজি স্টেশনগুলোর মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। এর মধ্যে পেট্রোলপাম্প ও সিএনজি স্টেশনে নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রত্যেক পেট্রোলপাম্প ও সিএনজি স্টেশন এলাকা রাত্রিকালীন ছবি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ও ডিভিআরসহ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা এবং ডিভিআর নিরাপদ স্থানে স্থাপন করা। রিজার্ভারে তেল লোডের সময় নিজস্ব জনবল দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ওই সময়ে সব ধরনের যানবাহন পেট্রোলপাম্পে প্রবেশ করতে না দেয়া। লুজ বা খোলা জ্বালানি তেল বিক্রি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা, তবে বাড়ি, ফ্যাক্টরি বা প্রতিষ্ঠানের জেনারেটর চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে বিক্রি করা এবং পেট্রোলপাম্প ও সিএনজি স্টেশনে রক্ষিত রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা। পেট্রোলিয়াম বিধিমালা-২০১৮-এর লাইসেন্সের শর্তাবলি যথাযথভাবে প্রতিপালন করার পাশাপাশি যেকোনো প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করার জন্য বলা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *