জাতীয়

গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে বাংলাদেশ, প্রধানমন্ত্রীর সফরে চোখ সবার

টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনা প্রথম বিদেশ সফর করেন জার্মানিতে। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশটিতে অনুষ্ঠিত মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দেন। তবে সেটি দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল না, বহুপাক্ষিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের বিষয় ছিল।

থাই প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় সফরে বুধবার ব্যাংকক গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) অধিবেশনেও যোগ দিয়েছেন তিনি।

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক জাতিসংঘের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কমিশনের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-ইরান ও ফিলিস্তিনির মধ্যকার যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা আমি জানি। বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধ চায় না। আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা এবং মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আসিয়ানকে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর ব্যাংককে এটাই হবে বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। এ উপলক্ষে গত সপ্তাহে যৌথ বিবৃতি প্রচার করে ঢাকা ও ব্যাংকক। তাতে বলা হয়, আসন্ন সফরের মধ্যদিয়ে দুই বন্ধু দেশের মধ্যে ‘সহযোগিতার নতুন জানালা’ উন্মোচিত হবে। এটি হবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

এর আগে এই দফা ক্ষমতা গ্রহণের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মান সফর করেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সেখানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আলথানি ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিতে ফ্রেডিরিকসেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং জার্মানির ফেডারেল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী সভেনজা শুলজেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

নির্বাচনের আগে বহুবিধ চাপের মুখে ফেলার চেষ্টা পরিলক্ষিত হলেও এখন নানা কারণেই আগ্রহের জায়গা হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেইজিং নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন। ঢাকার পক্ষ থেকে জানানো হয়, রমজানে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর করেন না। বেইজিংয়ের চাওয়া, চলতি বছরের মধ্যে অবশ্যই যেন চীন সফরে যান শেখ হাসিনা।

ঢাকার কূটনৈতিক অঙ্গন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় সফর কোথায় যাবেন সেটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হয় ঢাকাকে। প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০১৯ সালের পর দুই শীর্ষ নেতা ওই বৈঠকে বসেন। এখন প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে গেলে আবার তাদের মধ্যে বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চীনের পাশাপাশি তালিকায় আছে ভারত সফরও। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর দিল্লি সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লোকসভা নির্বাচন শেষ হবে পহেলা জুন। তবে দিন-তারিখ এখনো নির্ধারিত নয়।

সম্প্রতি সফর শেষ করেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই দফায় ৭০ মিনিটের বেশি সময় আলোচনায় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে খোলামেলাভাবে কথা বলেছেন শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। বাংলাদেশ ও কাতারের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সংযুক্তি, পর্যটনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজতে কাতারের আমির আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে তিনি দেশে ফিরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *