প্রীতি উরাং’র মৃত্যু, আশফাক দম্পতি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য
ডেইলি স্টারের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসার গৃহকর্মী প্রীতি উরাং-এর মৃত্যুর ঘটনায় গুরুতর অপরাধে লঘু মামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ মন্তব্য করেন। বলেন, সৈয়দ আশরাফুল হকের বাসায় একাধিক গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর প্রীতি উরাং এর মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলা দিয়ে অপরাধকে আড়াল করা হয়েছে।
এই মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় এনে ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গৃহকর্মীদের সুরক্ষা এবং কল্যাণের জন্য বারবার সরকারের কাছে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দাবি ও অনুরোধ জানানো হলেও বাস্তবে আমরা এর কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। সাম্প্রতিক সময়ে গৃহকর্মীদের নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা আমাদেরকে এর প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সর্বশেষ আদিবাসী শিশু প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের কথা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী ও সরকারকে জানাতে এবং নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’
বক্তব্যে বলা হয়, ‘এই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুরে সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারের বাসায় আদিবাসী এই শিশুটির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। ঘটনার সময় সৈয়দ আশফাকুল হক ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৪ এপ্রিল তিনি চাকরিচ্যুত হন। প্রীতির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তবে এ বিষয়ে যে ফলোআপ গণমাধ্যমে হওয়া দরকার ছিল, অনেক ক্ষেত্রে তাকে আংশিক বলে মনে হয়েছে আমাদের কাছে। গুরুতর অপরাধে লঘু মামলা করা হয়েছে।
প্রীতি উরাং-এর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে তাকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু, স্বাধীন, নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত, পক্ষপাতহীন ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই আমরা।’
ঐ বাসার আরো কয়েকজন শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেই সকল ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার হয়নি উল্লেখ করা বক্তব্যে বলা হয়, ‘আরো অনেক শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেই সকল অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে অটল থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছি আমরা।’
লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায় সৈয়দ আশফাকুল হকের মোহাম্মদপুরের ওই ফ্ল্যাট থেকে গত বছরের ৪ আগস্টে ৭ বছরের আরো একজন গৃহকর্মী পড়ে গিয়েছিল বা লাফ দিয়েছিল।
সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সরেজমিনে এই সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, মোহাম্মদপুর, স্থানীয় থানা এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করা হয়।
বক্তব্য বলা হয়, ‘ডিএমপি পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তড়িঘড়ি করে পেশেন্টকে সরিয়ে নেওয়ায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সৈয়দ আশফাকুল হকের অফিসের লোকেরা হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মামলার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে শিশুটির এই সংবেদনশীল ক্ষতটির উল্লেখ নেই।
পড়ে যাবার আগেই দু’ পায়ের মাঝে শিশুটি আঘাত পাওয়ার কথা বলেছে আমাদের প্রতিনিধিদের কাছে। এই আঘাতটি কি? যার কারণে সে মরে যেতে চেয়েছিল? আমাদের অনেক আশঙ্কা আছে। আমরা মনে করছি, এর অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আপনারা জানেন, ঘটনার পরে সৈয়দ আশফাকুল হকের পক্ষে ওই শিশুটির পরিবারের সঙ্গে আদালতের মাধ্যমে ২ লাখ টাকায় বিষয়টির আপসরফা হয়েছে। যদিও আমরা সরেজমিনে গিয়ে জেনেছি ওই টাকাও মধ্যস্বত্বভোগীর ভোগে চলে গেছে।’
বক্তব্যে বলা হয়, ‘হুবহু একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দুর্ঘটনা হতে পারে না। ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ মামলা দিয়ে অপরাধকে আড়াল বা লঘু করা হচ্ছে, আমরা এমন আশঙ্কা করছি। আমাদের অনুসন্ধানে জেনেছি। মুসন্ধানে জেনেছি মৃত্যুর সময় প্রীতির বয়স ছিল ১৩ বছর (২০১৮ সালে ৭ বছর বয়সে প্রাক-প্রাথমিক স্কুল ছাড়ার বিবেচনায়)।’
সচেতন নাগরিক সমাজ জানায়, মামলার এজাহারে প্রীতির বয়স ১৩ বছরের বদলে ১৫ বছর বলে উল্লেখ করা উদ্দেশ্যমূলক।
বক্তব্যে বলা হয়, ‘অভিযোগ রয়েছে আশফাকুল হকের স্ত্রী তানিয়া খন্দকার প্রায়ই তার বাসায় কর্মরত গৃহকর্মীদের মারধর করতেন। একটি টিভি চ্যানেলে প্রীতিকে পরীক্ষাকারী একজন ডাক্তার বলেছেন, প্রীতির গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পায়ুপথের আকৃতি অস্বাভাবিকভাবে বড়।