দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত জাফর আহমদকে জেতাতে মরিয়া বদি
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও দলের সমর্থক ভোটাররা দ্বিধাবিভক্ত। আর সে কারণে নির্বাচনে জয়–পরাজয় নির্ধারণে বিএনপির সমর্থক ভোটারদের ওপরও নির্ভার করতে হচ্ছে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আলম ও জাফর আহমদকে। নুরুল আলম টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। অন্যদিকে জাফর আহমদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। শক্তিশালী দুই প্রার্থী আবার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানও ছিলেন।
জাফর আহমদের পক্ষে শুরু থেকে মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। জাফরকে জিতিয়ে আনতে বদি সর্বশক্তি দিয়ে লড়ছেন। ভোটারদের অভিমত—এই নির্বাচন বদির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে জাফর আহমদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করায় বেকায়দায় পড়েছেন বদি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নুরুল আলম ও তাঁর অনুসারী দলের নেতারা বিভিন্ন পথসভায় জাফরকে ইয়াবা কারবারি ও কালোটাকার মালিক এবং বদিকে ইয়াবার গডফাদার হিসেবে আখ্যা দিয়ে বর্জনের দাবি জানাচ্ছেন।
জাফরকে জিতিয়ে আনতে বদি সর্বশক্তি দিয়ে লড়ছেন। ভোটারদের অভিমত—এই নির্বাচন বদির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে জাফর আহমদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের ( দুদক) দায়ের করা একটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করায় বেকায়দায় পড়েছেন বদি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নুরুল আলম ও তাঁর অনুসারী দলের নেতারা বিভিন্ন পথসভায় জাফরকে ইয়াবা কারবারি, কালোটাকার মালিক এবং বদিকে ইয়াবার গডফাদার হিসেবে আখ্যা দিয়ে বর্জনের দাবি জানাচ্ছেন।
কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের জাফর আহমদের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদক কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, জাফর আহমদ জনপ্রতিনিধি থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৯ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন।
বদির অনুসারী জাফর আহমদ তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ২৯ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৪২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯১ হাজার ৮৮০ এবং নারী ৮৮ হাজার ৫৩৮ ভোট। ভোটকেন্দ্র ৬০টি।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। তাঁরা হলেন নুরুল আলম (টেলিফোন), জাফর আহমদ ( আনারস) ও জাফরের ছেলে দিদার মিয়া (মোটরসাইকেল)। শুরু থেকে দিদার মিয়া মাঠে নেই। বাবার পক্ষেই তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী লড়ছেন।
কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জাফর আহমদের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদক কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, জাফর আহমদ জনপ্রতিনিধি থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৯ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বার নির্বাচন করেন বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার। তখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আলমের বড় ভাই। নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে শাহীন আক্তার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাফর আহমদের পথসভাগুলোতে উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশে বদি তাঁর স্ত্রী ও নুরুল বশরের ভোটের ব্যবধান তুলে ধরে নুরুল আলমের পরিণতিও ভাইয়ের মতো শোচনীয় হবে বলে প্রচার করছেন। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ এবং উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পুরো অংশ নুরুল আলমের পক্ষে সক্রিয় থাকায় জাফর আহমদকে সহজে জিতিয়ে আনা বদির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পথসভাগুলোতে বদি পরিবারের সমালোচনা করে নুরুল আলম বলছেন, গত ১৫-২০ বছরে টেকনাফের শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ তেমন উন্নয়ন হয়নি। মাদক চোরাচালান, অপহরণ, খুনখারাবি বেড়েছে অনেক। মাদকমুক্ত, চাঁদাবাজ-কালোবাজারি ও দুর্নীতিমুক্ত নিরাপদ টেকনাফ গড়তে তিনি অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়ছেন। ভোটাররা এবারও অপশক্তির বিরুদ্ধে রায় দেবেন। অন্যদিকে জাফর আহমদ এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি স্মার্ট টেকনাফ গড়তে ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার করছেন। সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার ও তাঁর স্বামী আবদুর রহমান বদি সব সময় তাঁর পাশে থাকেন।
নির্বাচনী বিরোধের জেরে ২ মে রাতে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বনিয়া এলাকায় নুরুল আলমকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের অভিযোগ ওঠে বদির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রাতেই টেকনাফ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নুরুল আলম। যদিও এ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন বদি। গত নির্বাচনে জাফর আহমদকে হারিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুল আলম। তখনো জাফরের পক্ষে ছিলেন বদি।
ভোটাররা জানান, টেকনাফের যেকোনো নির্বাচনে বদি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ান। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কক্সবাজার-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বদির পরিবর্তে তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তারকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক তালিকায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বদির নাম রয়েছে। তালিকায় গডফাদার হিসেবে আছেন বদির চার ভাইসহ পরিবারের অন্তত ২৬ জনের নাম। যদিও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত নন বলে বারবার দাবি জানিয়ে আসছেন বদি।