দেশজুড়ে

ক্ষতিগ্রস্তরাই মেরামত করছেন ভেঙে যাওয়া বাঁধ

খুলনার কয়রায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভেঙে যাওয়া বাঁধ নিজেদের উদ্যোগে মেরামত করছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই নিজেদের ভালো থাকার তাগিদে কাজে এসেছেন সবাই। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নারী, পুরুষ, কিশোর ও শিশুরাও কাজে সহযোগিতা করেছে।

খুলনার কয়রা উপজেলায় মহেশ্বরীপুর এলাকায় সোমবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিটি দুর্যোগের পর ভাঙা বাঁধ মেরামতে স্থানীয় মানুষকেই এভাবে দায়িত্ব নিতে দেখা যায়। এটা এখন এ অঞ্চলের মানুষের নিয়মিত কাজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সোমবার বিকেলে কয়রা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেছে, মানুষ কেবল মহেশ্বরীপুর এলাকায় বাঁধ মেরামত করছেন তা নয়। জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার যে ১৭টি স্থান দিয়ে বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছিল, তা মেরামতের জন্য ভুক্তভোগীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

গ্রামবাসী বলেন, বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের আগে সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা এড়িয়ে গেছে। অথচ বাঁধ ভাঙলে বারবার ভুক্তভোগী মানুষকেই তা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হয়।

কয়রার গড়িয়াবাড়ী গ্রামের শাকবাড়িয়া নদীর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে আসা সুকুমার মণ্ডল বলেন, ‘একদিন আয় না করলে সংসার চলে না। তবুও বাঁচার তাগিদে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতি হচ্ছে। আমরা না করলি এ বাঁধ বানাতি অনেক দেরি হবে। তখন এলাকায় আর বাস করবার মতো পরিস্থিতি থাকবে না।’

এছাড়া ভারী বৃষ্টিতে কয়েকটি জায়গায় পুনরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঁধ। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরচর এলাকার বাঁধ।

কয়রার দশালিয়া গ্রামের কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘জোয়ারের সময় বাঁধের একেবারে কিনারে পানি চলে এলে এলাকাবাসী বাঁধ রক্ষায় কাজ শুরু করেন। ভোর পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ চলে। বাঁধ অনেকটা মেরামত করা সম্ভব হলেও ভোরের দিকে জোয়ারের পানির উচ্চতার কাছে তা আর টিকতে পারেনি। দুপুরের পর থেকে তারা বাঁধ মেরামতের কাজ করলেও এখনো বাঁধটি ঝুঁকিমুক্ত হয়নি।’

খুলনা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, ‘জোয়ারের পানি উপচে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দিয়ে যাতে পুনরায় আর লোকালয়ে পানি না ঢুকতে পারে, এ জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করলেও পাউবোর পক্ষ থেকে স্থানীয় লোকজনকে বস্তা, বাঁশসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু নিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। দশালিয়া বাঁধটি মেরামতের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’

কয়রা উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশের কারণে এবং ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৯৫ হাজার। ঝড়ে বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যা তিন হাজার। অন্তত ৫০০ একর মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত কয়রার ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।

কয়রা আবহাওয়া কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুল বান্না বলেন, ‘সোমবার সকালে ঘূর্ণিঝড় রেমালের মূল অংশ কয়রা উপজেলা অতিক্রম করে। তখন কয়রায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।’

কয়রার ইউএনও এ বি এম তারিক উজ জামান বলেন, ‘কয়রার মানুষ দিনভর স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করা জায়গাগুলো আটকাতে পেরেছেন। এখানকার মানুষ বড় কোনো দুর্যোগ এলে সবাই স্বেচ্ছাশ্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য উপজেলা প্রশাসনের গঠিত টিম কাজ করছে। তা ছাড়া যারা এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন, তাদের খাবার ও পানি সরবরাহ-সহ সকল ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *