চট্টগ্রামবাঁশখালী

অসাধ্য সাধন করলেন দুই শিক্ষার্থী, পরীক্ষা না দিয়েই জিপিএ-৫!

পরীক্ষা ছিল না মনে করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষায় অংশ নেননি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই পরীক্ষার্থী। পরে তারা তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছালে দেখতে পান পরীক্ষা শেষ করে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে পুরো উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

সেদিন কেন্দ্র সচিব ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়, কেন্দ্র সচিব ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের খামখেয়ালীপনার কারণে দুই পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু গত ১২ মে প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এই দুই শিক্ষার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছেন। সাদিয়া সোলতানা ও উর্মি আক্তার নামের এই দুজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে কীভাবে পাস করলেন সেটা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রকাশিত ফলাফলে উপজেলার ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়। এই স্কুলের পাসের হার ৯২ শতাংশ। মোট ৩০৩ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেন। এরমধ্যে ৩ জন অনুপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট ৩০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৭৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭ জন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় মানবিক বিভাগের ১৬৭ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৬৩ জন ও বিজ্ঞান বিভাগের ৭৩ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগের ৭৩ জনের মধ্যে পাস করেছে ৭২ জন। একজন শিক্ষার্থী ফেল করেছে রসায়ন বিষয়ে। অর্থাৎ যে দুই শিক্ষার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি তারাও পাস করেছেন।

পরীক্ষার দিন (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রেজাউল করিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বুধবার এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র বাঁশখালী-০১ (২০২) বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইজন বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আইসিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে জানতে পারি, তারা বেখেয়াল ছিল এবং যখন জানে তখন বেলা ৯টা ৪০ মিনিট। তাড়াহুড়ো করে বের হয়, চাম্বল বাজার, টাইম বাজারে তাঁদের ২০ মিনিটের কাছাকাছি যানজটে কেটে যায়। এবং হলে পৌঁছে গিয়ে দেখে পরীক্ষার্থীরা বের হয়ে আসছে। অর্থাৎ আইসিটি পরীক্ষা শেষ। এটাই হল চরম বাস্তবতা, এই পর্যন্ত শিক্ষার্থীর অবহেলা এবং যানজটকে দায়ী করতে পারি আমরা। ১৪/১৫ বছরের শিক্ষার্থীর এই ভুল কোন ছোট ভুল নয়। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁদের ভুলকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা সাইবার বুলিং এর সমান হিসেবে দেখছি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রেজাউল করিমকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র বাঁশখালী-০১ (২০২) বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র সচিব রতন চক্রবর্তী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবোর্ড বৃহস্পতিবার (৬ জুন) আমাকে তলব করেছিল। আমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে এসেছি। পরীক্ষা না দিয়েও ভুলবশত পাস চলে আসলে ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে শিক্ষাবোর্ড বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে সেটি তাদের এখতিয়ার।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এএমএম মুজিবুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘যারা পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করে, তাদের কোনও একটা ভুলের কারণে এটা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করতে গেলে তো ভুল ত্রুটি থাকে। আমাদের শৃঙ্খলা কমিটিতে বিষয়টি উঠবে। আমরা পরীক্ষার ফলাফল যখন ঘোষণা করেছি, এক মাসের ভেতরে সমস্যা সংশোধন, পরিবর্তন, ভুল ত্রুটি যা আছে এগুলো ঠিক করার একটা সুযোগ আছে।

বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার এ ব্যাপারগুলো অত্যন্ত সিক্রেট। এই মুহূর্তে কোনো আপডেট আপনাকে দেওয়া যাচ্ছে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *