শুরু হলো পশুর হাট : ভিড় থাকলেও বিক্রি নেই
‘অ ভাই দাম হত?’ বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ছোট্ট ইবতিসাম জাওবাত। তার প্রশ্নে গরু বিক্রেতার সাড়া না মিললেও উৎসাহে ছেদ পড়েনি এতটুকুও। ঘুরে ঘুরে বড়দের মত একের পর এক বিক্রেতাদের কাছে গরুর দাম জিজ্ঞেস করছে সে, যেন পাক্কা ক্রেতা। তবে গরুর খুব কাছে ঘেঁষতে মানা সঙ্গে থাকা বড় ভাই ইবতিসাম জাওয়াদের। তার শঙ্কা, কাছে ঘেঁষলে গরুর পায়ের আঘাতে ঘটতে পারে বিপদ। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় সাড়ে পাঁচটার দিকে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এই দুই ভাইয়ের দেখা মেলে নুর নগর হাউজিং সোসাইটি পশুর হাটে। সঙ্গে ছিল সমবয়সী চাচাত ভাই ইসতিয়াক কামাল ওয়াসিফ ও বন্ধু নিলয় বড়–য়া ইশান। বেচাকেনা শুরুর প্রথম দিনে পশুর হাট ঘুরে দেখতে এসেছে এই চার দুরন্ত কিশোর। তাদের মতো হাটে ভিড় জমিয়েছে অসংখ্য শিশু-কিশোর ও তরুণ। সংখ্যায় কম হলেও আছেন প্রাপ্ত বয়স্করাও।
এইদিন একই হাটে কথা হয় গরু বিক্রেতা সুজন ইসলামের সঙ্গে। নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের ২৮ টি গরু নিয়ে ঝিনাইদহের শৈলকূপা থেকে এসেছেন তিনি। সুজন পূর্বকোণকে বলেন, আমরা দুই গাড়ি গরু নিয়ে এসেছি গতকাল। গত বছরও এই হাটে একই পরিমাণ গরু বিক্রি করেছিলাম। আমাদের যে ক’টা গরু আছে, দেড় লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।
ঢাকার গাজিপুর থেকে আসা মোহর আলী নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, আমাদের এগ্রো ফার্ম থেকে দেশের বড় বড় হাটগুলোতে গরু পাঠানো হয়েছে। আমারা এখানে ২৯ টি গরু এনেছি। আজ প্রথম দিনে লোকজন কম, তবু আশা করছি কোরবানির আগে সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে।
এদিন নগরীর বিভিন্ন পশুরহাট ঘুরে দেখা যায়, বেচাকেনা শুরুর প্রথমদিন হিসেবে দর্শনার্থীর ভিড় থাকলেও বিক্রি শূন্যের কোটায়। হাট পরিচালনা সংশ্লিষ্টরাও অবকাঠামোগত প্রস্তুতিতে ব্যস্ত এখনও । এই বিষয়ে শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নুর নগর হাউজিং সোসাইটি পশুর হাট পরিচালনা কমিটির পরিচালক মো. রফিক বলেন, আমরা মোটামুটি প্রস্তুত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রামের প্রায় সব হাটে গরু আসছে। তবে এখনও পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়নি। আজ এখন পর্যন্ত এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা দামে একটি গরু বিক্রি হয়েছে।
এবার নগরে ৭ টি অস্থায়ী ও তিনটি স্থায়ী হাটে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। এর বাইরে জেলার ১৫ উপজেলায় বসবে আরও দুই শতাধিক হাট।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এবার সব মিলিয়ে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫ টি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে চট্টগ্রামে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৯ হাজার ৬৩৮ টি পশুর চাহিদা রয়েছে সন্দ্বীপ উপজেলায়। সবচেয়ে কম ১৩ হাজার ৬৯৮ টির চাহিদা রয়েছে নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকায়। এবার চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদ ঘিরে প্রস্তুত করা হয়েছে সব মিলিয়ে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫১ টি পশু। সেই হিসেবে ৩৩ হাজার ৪০৬ টি পশুর ঘাটতি রয়েছে এবার। তবে বন্দরনগরীর হাটে আশেপাশের জেলা ও উত্তরবঙ্গ থেকে খামারিরা পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসায় সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে কোরবানির ঈদ ঘিরে নগরে অবৈধ পশুর হাট প্রতিরোধে ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এর আগে বিকেলে নুর নগর হাউজিং অস্থায়ী কোরবানির হাট উদ্বোধন করেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আফরোজা কালাম।