নগর পরিবহনে নতুন অতিথি ‘চট্টলা চাকা’
নগরীর সড়কে চালু হচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস সার্ভিস। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১ জুলাই থেকে সড়কে বাসগুলো নামানোর কথা রয়েছে। ‘চট্টলা চাকা’ নামে বাসগুলো সড়কে নামানোর উদ্যোগ নিয়েছে ‘শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা। প্রথম ধাপে সংস্থাটি ২০টি বাস নামানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি (আরটিসি) তিন শর্তে বাসগুলো নামানোর প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। শর্তগুলো হল-প্রতিটি গাড়ি ৪০ সিটের হতে হবে। গাড়ি ছাড়ার শুরু এবং শেষ প্রান্তে অর্থাৎ কাপ্তাই রাস্তার মাথা এবং কাটগড় প্রান্তে বাস রাখার নিজস্ব ডিপো থাকতে হবে, ডিপো ভাড়া নেয়ার চুক্তিপত্র বিআরটিএর কাছে জমা দিতে হবে এবং লোকাল যাত্রী নিতে পারবে না।
‘শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, আরটিসির সভায় আমরা ২০টি বাস চলাচলের প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছি। কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কাটগড় পর্যন্ত এসব বাস চলাচল করবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১ জুলাই থেকে সড়কে বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আরটিসির শর্তসাপেক্ষে বাস নামানোর অনুমোদন প্রসঙ্গে শাহজাহান জানান, আরটিসি আমাদের তিনটি শর্ত দিয়েছে। সব শর্তপূরণ করেই সড়কে গাড়ি নামানো হবে। ইতিমধ্যে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এবং কাটগড়ে বাস পার্কিংয়ের জন্য জায়গা দেখা হচ্ছে। আশা করছি জুলাই মাসের আগে সবকিছু হয়ে যাবে। নিজস্ব পার্কিংয়ের স্থান না থাকলে গাড়িগুলো সড়কে রাখা যাবে না। এরমধ্যে নিজস্ব ডিপোর ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, শর্তসাপেক্ষে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কাটগড় পর্যন্ত ‘শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে এসি বাস নামানোর প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে আরটিসির সভায়। সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বাসগুলোকে রুট পারমিট দেয়া হবে।
বিআরটিএ কর্মকর্তা মতিউর জানান, গাড়িগুলো কেনার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিআরটিএতে আবেদন করতে হবে। এছাড়া গাড়িগুলো বিআরটিএর কাছে প্রদর্শন করতে হবে। এরপর বিআরটিএর একটি টিম আরটিসির দেয়া শর্তগুলো পূরণ করেছে কিনা তা দেখতে সরেজমিন পরির্শনে যাবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাসগুলোতে রুট পারমিটের চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।
২০১৬ সালে প্রিমিয়ার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি নগরীর ১৪ নম্বর রুটে ছয়টি পরিবহন নিয়ে এসি বাস সার্ভিস চালু করেছিল। সেটি স্থায়ী হয়নি। কয়েক মাসের মধ্যে সড়ক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নগরীর তিনটি রুটে এসি বাস চালুর উদ্যোগ নেন। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এসব বাস চালুর জন্য কর্পোরেশনের ৫২তম সাধারণ সভায় সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। প্রথম দিকে তিনটি রুটে ১০০টি বাস নামানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এরমধ্যে কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা, ভাটিয়ারী থেকে লালদিঘি এবং নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদ রুটে বাসগুলো নামানোর কথা ছিল। পরে এই উদ্যোগ সফল হয়নি। আট বছর পর আবারও নতুন করে এসি বাস নামানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আরটিসির সভায় অনুমোদনও পেয়েছে ‘শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেড’।
শান্তি এক্সপ্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, রোজার ঈদের পর বাসগুলো নামানোর কথা থাকলেও ডলার সংকটের কারণে বাসগুলোর চেসিস ভারত থেকে আমদানি করা সম্ভব হয়নি। এখন জুলাই মাসের শুরুতে নামাতে পারবো বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে ১০টি বাস প্রস্তুত হয়েছে। চেসিস ভারতীয় কোম্পানি টাটা মোটরসের হলেও বডিগুলো ঢাকায় প্রস্তুত করা হচ্ছে। যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রতিটি বাসে আসন থাকবে ৪০টি। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় থাকবে, অর্থাৎ নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক দেবেন তারা।
উল্লেখ্য, নগরীর ১৮ রুটে ১৫৪৫টি বাস মিনিবাস চলাচলের অনুমোদন দেয়া হলেও ১০৪০টি গাড়ি চলাচল করছে। আরো ৫০৫টি বাস মিনিবাস চলাচল করতে পারবে রুটগুলোতে। একইভাবে নগরীতে অটোটেম্পোর রুট রয়েছে ২১টি। রুট গুলোতে ২৩৯৭টি গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে আরটিসি। সেখানে রুট পারমিট নিয়েছে ১৮৩৯টি। আরো ৫৫৮টি অটোটেম্পোর রুট পারমিট নেয়ার সুযোগ রয়েছে। ১৮টি রুটে ১৪৫৬টি হিউম্যান হলার চলাচলের রুট পারমিট অনুমোদন দিয়েছে আরটিসি। সেখানে চলাচল করছে ৯৯৪টি। আরো ৪৬২টি হিউম্যান হলার পারমিট নিতে পারবে। এরবাইরেও প্রায় ২০০ বাস মিনিবাস আটশোর বেশি হিউম্যান হলার ও টেম্পো নগরীর বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে।