চট্টগ্রাম

ঈদের ছুটিতে মূল্যবান সম্পদ রাখা যাবে থানায়

ঈদের ছুটিতে স্বজনদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে শহর ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসী। এরইমধ্যে নগর প্রায় ফাঁকা। ফাঁকা নগরে বাসা-বাড়ি চুরির ভয় সবার মাথায়। তবে এবার অভয় দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। মূল্যবান সম্পদ থানায় রেখে যাওয়ার পরামর্শ তাঁর।

তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে প্রতিবছরই স্বজনদের সাথে ঈদ করতে নগরবাসী শহর ছেড়ে যায়। এসময় শহর ফাঁকা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের একটি অভিজ্ঞতা আছে। আমি পরামর্শ দিচ্ছি যে, আপনাদের মূল্যবান যদি কোনো সম্পদ থাকে সেগুলো আত্মীয়-স্বজনের বাসায় কিংবা থানায়ও রাখতে পারেন।

শনিবার (১৫ জুন) নগরের চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকার কর্ণফুলী পশুর হাটের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যাদের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে সেসকল প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের একসাথে ছুটি না দিয়ে পালাক্রমে ছুটি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আর কোনো রকম ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেবেন। পাশাপাশি যাদের অবস্থা ভালো আছে তাদেরকে বলেছি, আপনারা আইপি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগান। যেন আপনি দূরবর্তী স্থান থেকেও আপনার প্রতিষ্ঠানের অবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সেই অনুসারে প্রয়োজনে পুলিশের সাথে যোগাযোগও করতে পারবেন।’

ঈদে নগরবাসীর নিরাপত্তায় চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় সাজানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদকে ঘিরে আমরা চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমাদের পোশাকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, আমাদের সাদা পোশাকে ব্যবস্থা আছে। আমাদের স্পেশালাইজড টিম প্রস্তত আছে। তাছাড়া আমরা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্টের সাহায্য নিয়েছি। আমাদের থানার বিভিন্ন ধরনের গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে।’

নিরাপত্তা ব্যবস্থা তিনভাগে ভাগ করার কথা জানিয়ে কমিশনার বলেন, ‘যেকোনো উৎসব-পার্বনে আমাদের সদস্যরা খুব কমই ছুটিতে যেতে পারে। আমরা নিরাপত্তা স্তরকে তিনভাগে সাজিয়েছি। ঈদের পূর্ব সময় পর্যন্ত এক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। সেখানে আমাদের অধিক সংখ্যক সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ঈদের দিন ঈদ জামায়াতকে কেন্দ্র করে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া ঈদ পরবর্তী এক সপ্তাহ আরেকটি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সেইধরনের কর্মসূচি আমাদের নেওয়া আছে। আমরা আশা করছি আমাদের গৃহীত ব্যবস্থা এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় আমরা নগরের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখতে পারবো।’

পশুরহাটের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি যেখানে-সেখানে যেন পশুরহাট না বসে। আমরা এক্ষেত্রে অনেকাংশেই সফল হয়েছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে অনেকটাই ধারণা ছিলো। কোনো কোনো সময় স্থানীয় লোকজন নানা ধরনের অত্যাচার করে থাকে ইজারাদারদের। আমার সে বিষয়েও খোঁজখবর নিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত বড় কোনো অভিযোগ পাইনি। এরইসাথে এক হাটের গরু জোরপূর্বক আরেক হাটে নেওয়ার যে প্রবণতা ছিল সেটা এ বছর নেই বললেই চলে। আমরা এ পর্যায়ে এসে বলতে পারি যে, আমাদের গৃহীত ব্যবস্থা এবং যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তাদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা এবারের পশুরহাটে সন্তোষজনক অবস্থা বজায় রাখতে পেরেছি। আশা করছি, ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এ অবস্থা অটুট থাকবে।’

‘ঈদের দিনের জন্য আমাদের একটি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি হাটে জালনোট সনাক্তকরণ ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা আছেন। কিছু কিছু মার্কেটে ক্যাশলেস লেনদেনের ব্যবস্থা আছে। সবমিলিয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অজ্ঞান পার্টির যে প্রবণতা থাকার কথা, অতীত অভিজ্ঞতা বলে এটা এবারও থাকতে পারতো। আমরা তাই ইজারাদারদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রেস্টুরেন্ট করতে বলেছি। আর সেই রেস্টুরেন্ট যেন পরিচিত কেউ চালায় সে ব্যবস্থা করতে বলেছি, যাতে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের শঙ্কা না থাকে।’

চোরাই পথে গরু আসলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘চোরাই এবং অবৈধ গরু যদি শনাক্ত হয় বা অভিযোগ আসে তাহলেই ব্যবস্থার প্রশ্ন আসবে। কিন্তু যখন একটি গরু নিয়ে আসা হবে তখন চট করে বোঝা যাবে না এটি চোরাই কিংবা অবৈধ কিনা। আমাদের চট্টগ্রামের বড় বড় মার্কেটে যেসকল বেপারিরা গরু নিয়ে আসেন তারা সাধারণত নির্ধারিত। তারা এই মার্কেটগুলোর সাথে অনেকদিন ধরে সংযুক্ত আছেন। যদি কোনো অভিযোগ আসে এবং যেখান থেকে চুরি হয়েছে সেখানের সোর্স থেকে খবর পাই তবে সোর্সের সাথে কানেক্টেড হয়ে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আ স ম মাহতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারীশ, উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) মো. তারেক আহম্মেদ, চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *