শান্তি চুক্তির ২৬ বছর পরও পাহাড়ে সংঘাত থামেনি
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাসিন্দা দীপঙ্কর প্রসাদ চাকমা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখার সদস্য। জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখাটি শান্তিবাহিনী হিসেবে পরিচিত ছিল।
দীপঙ্কর প্রসাদ চাকমার মতো শান্তিবাহিনীর বহু সদস্য ১৯৮০ এবং ৯০’র দশকে পাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে লড়াই করেছিলেন। তাদের প্রায় দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের ইতি হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ২রা জুলাই এক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে।
সে চুক্তির দুই মাস পরে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছিল শান্তি বাহিনীর সদস্যরা। এরপর শান্তি বাহিনীর সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিও দেশের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে যোগ দেয়।
শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষে স্বাক্ষর করেন তাদের নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, যিনি সন্তু লারমা হিসেবে পরিচিত।
অস্ত্র সমর্পণের পর শান্তিবাহিনীর প্রায় দুই হাজার সদস্যের প্রত্যেককে সরকার ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল। এছাড়া শান্তি বাহিনীর সাতশর বেশি সদস্যকে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
এরপরও পাহাড়ে বারুদের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে চলছে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত। এই সংঘাতের কারণে পার্বত্য শান্তি চুক্তির দীর্ঘ ২৬ বছর পরও পার্বত্য জনপদে শান্তি ফিরে আসেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের সময় পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো অস্ত্র জমা দিলেও আজো পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া চলছে প্রতিনিয়ত।
পাহাড়ে চুক্তির পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সমাাজিক সংগঠন পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার বন্ধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সেনাবাহিনীর অপারেশন উত্তরণ জোরদার করার দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়া চুক্তির পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে সেনাবাহিনী যে উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করেছে তা আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। পাহাড়ে সাধারণ মানুষের দুর্যোগের সময় সেনাবাহিনীর অবদান চোখে পড়ার মতো।