কালুরঘাটে দুর্ঘটনার পর দুপারের নৌকা ‘উধাও’
কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীতে ফেরির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নৌকাযাত্রী নিখোঁজের ঘটনার পর থেকে ‘উধাও’ দুপারের সব নৌকা। প্রশাসনের নির্দেশনা নাকি ‘ভয়-আতঙ্ক’—কী কারণে মাঝিরা নৌকা বাইছেন না তা জানা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাঝি বলছেন, দুর্ঘটনার পর নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে কালুরঘাট সেতু এলাকায় তারা নৌকা চলাচল বন্ধ রেখেছেন। তবে এমন সিদ্ধান্ত কেন তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি তারা।
এদিকে, হঠাৎ করে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেরিতে যানবাহনের সমানেসমান যাত্রীর চাপ বেড়েছে। হেঁটে পারাপারের জন্য কালুরঘাট সেতুতে ওয়াকওয়ে চালু হলেও সেতুতে খুব একটা পদচারী ছিলেন না।
যাত্রীদের দাবি, শনিবার (২২ জুন) নৌকা থেকে পরে একজন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই নৌকাগুলো উধাও হয়ে গেছে। কালুরঘাটে নদী পারাপারে আর কোনো নৌকা চলছে না। তাই ফেরি করেই পারপার হতে হচ্ছে। এছাড়া হাঁটা-সময় দুটোই বাঁচে।
রবিবার ও সোমবার টানা দু’দিন সরেজমিনে দেখা গেছে, এতদিন ফেরি ছাড়তে দেরি হলে যাত্রীরা ‘সময় বাঁচাতে’ নৌকায় করে নদী পার হতেন। তবে গত শনিবার বিকেলে নৌকা থেকে পড়ে যাত্রী নিখোঁজের ঘটনার পর থেকে রবিবার ও সোমবার কালুরঘাটে নদী পারাপারে কোনো নৌকা চোখে পড়েনি। এ দুদিন ধরে দেখা গেছে, যাত্রীরা সবাই পারাপারের জন্য ফেরির অপেক্ষা করছেন। আর যাদের বেশি তাড়া আছে তারা অনেকেই কালুরঘাট সেতুতে তৈরি হওয়া ওয়াকওয়েতে হেঁটে পার হচ্ছেন।
হঠাৎ করে নৌকা উধাও হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাঝি বলেন, ‘শনিবার আমাদের একটি নৌকা থেকে যাত্রী নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। পরে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। তবে নিখোঁজের পর থেকে আমাদের সব নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
নৌকা বন্ধ করতে প্রশাসনের কোনো নির্দেশনা ছিল না কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, প্রশাসন থেকে কিছু বলেনি। নৌকা চালানো বা না চালানোর বিষয়েও কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে যারা এ অংশে নৌকা চালায় তারা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি নৌকা চালাবে না। এরপর থেকে নৌকা বন্ধ।’
কবে নাগাদ আবার নৌকা চালু হতে পারে— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টা বলা সম্ভব না। নৌকা পুনরায় চলাচলের বিষয়ে কোনো সিন্ধান্ত হয়নি। তবে আপাতত বন্ধ সেই সিদ্ধান্তের কথা জানি। বাকিটা পরে বলতে পারবো।’
এ প্রসঙ্গে জানতে সোমবার বিকেলে বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন সজীবকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
যানবাহনের সমানেসমান যাত্রী ফেরিতে
আগে নৌকা থাকার কারণে ফেরিতে যানবাহন ও যানবাহনের যাত্রীরা থাকতো। আর কিছু বাড়তি যাত্রী থাকতো। তবে গত দুদিন ধরে নৌকা বন্ধ থাকায় ফেরিতে সাধারণ মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।
সোহেল আকবর নামে একজন বলেন, ‘দুদিন ধরে নৌকা বন্ধ। এতদিন ফেরির জন্য অপেক্ষা করিনি। সময়ের সঙ্গে মিলে গেলে ফেরি করে চলে যেতাম। আর দেরি হলে নৌকায় উঠতাম। এখন তো নৌকা নেই। আর সেতুতে হাঁটার ব্যবস্থা থাকলেও কতজনইবা হাঁটতে চান। তাই ফেরিতে যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীর পরিমাণও বাড়ছে।’
ইনতেহাব বিন সিয়াম বলেন, ‘ফেরি করে যেতে তো টাকা লাগছে না। আর তাই এখন ফেরিই ভরসা। তবে অনেকে সেতু দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছেন। এতদিন নৌকা ছিল; তারা জনপ্রতি ১০ টাকা করে নিত। অনেকের তাড়া থাকলে নৌকা করেই পার হয়ে যেত। এখন তো নৌকা নেই; তাই ফেরি করেই চলে যাচ্ছে। আর এতে ফেরিতেও একটু চাপ বাড়ছে।’
ফেরিতে দায়িত্বরত এক কর্মচারী জানিয়েছেন, রবিবার সকাল থেকে ফেরিতে চাপ বেড়েছে। আগে যানবাহন ছিল; যানবাহনের কিছু যাত্রীর পাশাপাশি কিছু মানুষ ওঠতো। তবে শনিবার থেকে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় ফেরি করেই মানুষ বেশি কর্ণফুলী পারাপার হচ্ছে। তাই ফেরিতে যাত্রীদের একটু চাপ রয়েছে।
নৌকা আর চলাচল না করার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, ‘মনে হয় না, নৌকা আর চলাচল করবে। শনিবার নৌকা থেকে পরে যাত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর সব নৌকা ও মাঝিরা কোথায় উধাও হয়ে গেছে। তাই মনে হচ্ছে না, নৌকা আর চলবে। বাকিটা প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ ভালো জানবে।’
পরপারে দুজন
কালুরঘাট সেতুতে সংস্কার কাজের জন্য যানবাহন চলাচলে ফেরি চালু হয়। এরপর গত ২৯ এপ্রিল কলেজ শিক্ষার্থী ও সবশেষ ২২ জুন চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর পরিচালক আশরাফ উদ্দিন কাজলের প্রাণ গেল। প্রাণহানি ছাড়াও অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটেছে ফেরি চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত।