সীতাকুণ্ডের মন্দিরে ছদ্মবেশে ছিলেন এমপি আনার হত্যার আসামি
সীতাকুণ্ডের পাতালকালী মন্দিরে ছদ্মবেশ ধারণ করে ২৩ দিন ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভুঁইয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে জড়িত ছিল ফয়সাল ভুঁইয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান।
বুধবার (২৬ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তাদের ঢাকায় আনা হয়।
তাদের বহন করা হেলিকপ্টারটি বিকেলে পূর্বাচলে ১৮ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু ট্রাই-টাওয়ারের জমিতে অবতরণের পর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানে তারা নিজেদের নাম বদলে ফেলেন। ফয়সাল পলাশ রায় আর মোস্তাফিজুর শিমুল রায় নাম ধারণ করে হিন্দু সেজে মন্দিরে অবস্থান করেন। বলেন, মাকে তারা খুব ভালবাসেন। কালীমন্দির ছাড়া থাকতে পারি না। এভাবে তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে সেখানে ২৩ দিন অবস্থান করেন।
হারুন বলেন, তারা ইন্ডিয়াতে হত্যার কাজ শেষ করে ১৯ তারিখ দেশে ফেরেন। তারা শামীমের সঙ্গে কথা বলেন। দুজনকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা নিয়ে তারা খাগড়াছড়িতে চলে যায়। যেহেতু তারা আগে ট্রাকে চালাতেন সেজন্য তারা সীতাকুণ্ডের গহীন এলাকা চিনতেন। নিরাপদ ভেবে বাঁচার জন্য সেখানে অবস্থান নেন। হিন্দু নাম ধারণ করে আত্মগোপন করেন। বাঁচার জন্য তারা আরও নানান জায়গায় যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, বহুদিন ধরে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছিল। কখনো খবর পেতাম সুন্দরবনে, কখনো সমুদ্রে, কখনো গহীন বনে আছে। আমি বলেছিলাম, তারা যেখানেই থাকুক, পাহাড়ে থাকুক আর সমুদ্রে থাকুক তাদের ধরে আনব। আজকে তাদের ধরেছি। সংসদ সদস্য আনারকে হত্যায় যে সাতজন অংশ নিয়েছিল তার মধ্যে এই দুজন ছিল শিমুল ভুঁইয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তি। আজকে এই দুজনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে কিলিং মিশনে যে সাতজন অংশ নিয়েছিল তারা সবাই গ্রেপ্তার হলো। এর বাইরে বাকি যারা মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছে, অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছে, বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে আমরা মনে করি এসব ব্যক্তিকে এখন গ্রেপ্তার করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে শিমুল ভুঁইয়ার ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে মিন্টু ও গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তার করেছি। বাংলাদেশের কাছে সাতজন গ্রেপ্তার ও ইন্ডিয়াতে আছে সিয়াম ও জিহাদ।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ডিবি পুলিশ শিমুল ভুঁইয়া, শিলাস্তি ও তানভীরকে যখন প্রথম গ্রেপ্তার করে তখন কিন্তু ইন্ডিয়ান পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমরাও কিন্তু টিম নিয়ে তাদের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এরপর যখন জানলাম সিয়াম নেপালে তা তাদের জানিয়েছি। নেপালে গিয়েছি, সিয়ামকে গ্রেপ্তারে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছি।
তিনি বলেন, আনার হত্যার আরেক মাস্টারমাইন্ড যিনি আমেরিকা পালিয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে আমরা আমেরিকা দূতাবাসে কথা বলেছি। দেখা করে গ্রেপ্তারের অনুরোধ করেছি। ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছি। ইন্ডিয়ার কাছে কিন্তু সে মোস্ট ওয়ানটেড। তাদের সঙ্গে আমেরিকার চুক্তি আছে। তারাও চেষ্টা করছে, আমরাও চেষ্টা করছি।
মাস্টারমাইন্ডদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হারুন বলেন, আজকে গ্রেপ্তার দুজনসহ আগে গ্রেপ্তার সবাইকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করব। সবকিছু মিলে যদি আরও কেউ থাকে যারা সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, অর্থ দিয়েছে, প্ল্যান করেছে, তাদের যদি নাম পাই, তথ্য-উপাত্ত পাই, পারিপার্শ্বিক প্রমাণ পাই, তাহলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
রাজনৈতিক প্রভাব বা বাধা চাপ আছে কি না জানতে চাইলে হারুন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডিএমপি কমিশনার একাধিকবার বলেছেন কোনো চাপ নেই। যদি আমাদের উপরে চাপ থাকতো তাহলে এতো অ্যাচিভমেন্ট করতে পারতাম না। আমরা কিন্তু একজনের পর একজন আসামি গ্রেপ্তার করেছি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি তাকেই গ্রেপ্তার করেছি। যারা সরাসরি ক্লিন মিশনে জড়িত সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে, আমরা শুধু তাদেরকেই আইনে আওতায় নিয়ে আসছি। আমরা অনর্থক কোনো দিকে দাপাদাপি করছি না, নির্দোষ কাউকে হয়রানি করছি না। আমি মনে করি যিনি দোষী তাকেও কেউ ছাড়াতে পারবে না।