কালুরঘাট সেতু: দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট রেল-কাম-রোড সেতু নির্মাণের জন্য স্বল্প সুদে প্রায় ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের ঋণ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯ হাজার ৫৩৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ধরে)।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সিইও ইয়ুন হি-সাং ঋণ চুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের দুটি উন্নয়ন তহবিল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) ও ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফান্ড (ইডিপিএফ) থেকে এই ঋণ দেওয়া হবে। প্রকল্পটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে বাস্তবায়ন করবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার দেওয়া ঋণের মধ্যে ইডিসিএফ থেকে দেওয়া হবে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এই ঋণ মাত্র ০.০১ শতাংশ সুদে সাড়ে ১৫ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছর ৬ মাসে পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য এটাই সবচেয়ে কম সুদের ঋণ।
প্রকল্পে ইডিপিএফ থেকে দেওয়া হবে ৯ কোটি ডলার। ৭ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছরে মাত্র ১ শতাংশ হারে সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়শা খান বলেন, চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই এই রেল-কাম-রোড সেতু নির্মিত হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম আশা প্রকাশ করেন, নতুন অর্থবছরেই এ প্রকল্পে কোরিয়ান ঋণের অর্থ পাওয়া যাবে।
অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, কোরিয়া আমাদের উন্নয়ন সহযোগিতায় নতুন একটি দরজা খুলে দিয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আরও অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা আসবে দেশটি থেকে। তাদের এই সহযোগিতায় আমাদের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আমি মনে করি।
উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল-কাম-রোড সেতু নির্মাণের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন রেল ও সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিতকরণ; চট্টগ্রাম-কক্সবাজার করিডোরের অপারেশনাল সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ; আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন; ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশবিশেষ নির্মাণ, স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন।
উল্লেখ্য, কোরিয়া সরকার কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অগ্রাধিকার উন্নয়ন প্রকল্পে নমনীয় ঋণ সহায়তা দিয়ে আসছে।