তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরে তিস্তার নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওই সব এলাকার বাসিন্দারা।
সোমবার (১ জুলাই) বিকেলে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। দু-পয়েন্টের মাঝখানে গঙ্গাচড়ায় পানি পরিমাপ যন্ত্র না থাকায় এখানে পানির লেভেল জানা যায়নি।
পানির চাপে শেখ হাসিনা সেতু রক্ষা বাঁধের ব্লকে ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এ ছাড়া তিস্তা সেতু থেকে এক কিলোমিটার দূরে রক্ষা বাঁধের ব্লক ধস দেখা দিয়েছে। সোমবার সকালে মানুষজনকে পানির মধ্যে জিনিসপত্র সরাতে এবং নৌকায় চলাচল করতে দেখা যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, তিস্তা নদীর রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে, এই কাউনিয়া পয়েন্টে দুপুর ১২টার দিকে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
তিস্তায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর জেলার কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ওই সব এলাকার সবজিক্ষেতসহ ফসলি জমি। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক।
পানি বাড়া-কমায় ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। এর মধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল সূর্যমূখী ক্বারী মাদরাসা, চিলাখাল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, উত্তর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট, ইচলির চর, শংকরদহচর, কোলকোন্দ ইউনিয়নের পূর্ব বিনবিনা, নোহালীর চরের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারে মানুষরা গবাদি পশু ও বাড়ির প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। নিজেদের খাবার সমস্যা থাকলেও গবাদি পশুর খাবার নিয়েও বিপাকে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। বিশুদ্ধ পানি অভাবে চরম ভোগান্তি ও দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে।
ইউপি সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম জানান, পূর্ব বিনবিনার চর এলাকার বসবাস করা প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করছে।
পশ্চিম ইচলির বাসিন্দা মহসিন বলেন, “রোববার সন্ধ্যায় বাড়িঘরে পানি ঢুকতে থাকতে। পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় জিনিসপত্র আগেই তলিয় যায়। রাত খুব কষ্ট করে কাটাতে হয়েছে।”
বাগেরহাটের রোজিনা বলেন, “চর এলাকায় তিস্তার ধারে আগে বেড়িবাঁধ ছিল। বেড়িবাঁধ থাকার কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেও তাড়াতাড়ি বাড়িতে পানি ঢুকত না। চার-পাঁচ বছর আগে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলেও তা পুনরায় নির্মাণ না করায় এখন পানি বৃদ্ধি পেলে বাড়িতে পানি ওঠে।”
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, “রোববার রাতে পানি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। পানি কমলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় চর এলাকায় কোনো বেড়িবাঁধ নেই।”
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিনের তুলনায় সোমবার রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারাজের সব গেট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা নদীপাড়ের পরিস্থিতির বিষয়ে সবসময় খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, তিনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে পানিবন্দি বাগেরহাট এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং পানিবন্দি ৫০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার হিসেবে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিড়া, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ ও ১ লিটার তেলের একটি করে প্যাকেট বিতরণ করেছেন।