চট্টগ্রাম

নতুন পুলিশ কমিশনার কখন কোন থানায় যাবেন বডিগার্ডও জানবে না!

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) সদ্য যোগদান করা কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি কখন কোন থানায় যাব বডিগার্ডও বলতে পারবে না। আমি সিএমপির সব থানা চিনি। সবার বাড়িও চিনি। সুতরাং আপনাদের সাথে আমার কোনো গ্যাপ থাকবে না।’

সোমবার (৮ জুলাই) নগরের দামপাড়ায় সিএমপির মাল্টিপারপাস শেডে ‘মিট দ্যা প্রেস’-এ তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘সিএমপির ১৬ থানার ওসিদের কেউ যদি অপকর্ম করে তার দায় তাকেই নিতে হবে। সেই দায় আমি নিব না। আমি দুষ্টু গরু রাখবো না, শূন্য গোয়াল থাকবে আমার। এটা আমি নিশ্চিত করতে চাই। আমার মেসেজটা অলরেডি আমার থানার ওসিদের কাছে পৌঁছে গেছে।’

বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে পরামর্শ চেয়ে নতুন কমিশনার বলেন, ‘আমাকে আপনারা গাইড দিবেন আমার প্রথম কোন কাজটা করা উচিত। আপনি কমিশনার হলে প্রথম কোন কাজটা করতেন। আর কি কি সমস্যা রয়েছে সেগুলো আমাকে জানালে এটাকে এড্রেস করতে সহজ হবে। সব জায়গায় অপরাধের ধরন ভিন্নরকম। আমি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে ছিলাম। সেখানে ধরণ একরকম। এখানে ধরণ আরেকরকম। অপরাধ নির্মূলে কাজ শুধু পুলিশ নয়, আমরা সবাই মিলে করবো। সেক্ষত্রে সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা আমি চাই।’

চট্টগ্রামের মানুষের সাথে পুরোনো সম্পর্ক উল্লেখ করে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সবাইকে উদার্ত আহ্বান করবো যেকোনো সময় যে কোনো জায়গায় যদি বলেন কোনো সমস্যার কথা সেটা আমি শুনবো এবং চেষ্টা করবো সমাধান করার। আপনারা জানেন, আমি এখানে ৩২তম কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছি। এর আগেও আমি এখানে ডিসি পোর্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আবার চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ছিলাম। এই এলাকার মানুষের সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমার দাবিটা একটু বেশি থাকবে যেন আমি আমার দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে পারি।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘আমি এতটুকু নিশ্চিত করতে চাই, আপনাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হবে ডিফারেন্ট লেভেলের। কাজ কিন্তু আমার এবং আপনার একই। যদি কোনো তথ্য থানা থেকে আপনারা না পান সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন দেবেন। এখানে লুকোনোর কিছুই নেই। তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে থানার ওসিদের আমি আমার অতিরিক্ত কমিশনারের মাধ্যমে এই মেসেজটা দিয়ে দিয়েছি। আমি বলেছি, আমি কখন কোন থানায় যাব বডিগার্ডও বলতে পারবে না। আমি সিএমপির সব থানা চিনি। সবার বাড়িও চিনি। সুতরাং আপনাদের সাথে আমার কোনো গ্যাপ থাকবে না। আপনারা চান সমাজের ক্ষতগুলোকে তুলে নিয়ে আসতে। আর আমরা চাই হয় ক্ষতগুলো অপারেশন করে ফেলে দিতে। কাজটা কিন্তু একই। আপনারা তো আমাকে হেল্প করছেন।’

সম্প্রতি মাদরাসা ছাত্র নিখোঁজ নিয়ে ফেসবুকে পোস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকেই বলা হয়েছে গুজব। এটা নিয়ে আমিও কাজ করছি। আমার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী মোট ৮ জন প্রেম করে চলে গেছে। তাদের সবাইকে পাওয়া গেছে। অনেকে আছে পারিবারিক কারণে রাগ করে চলে গিয়ে আবার ফিরে এসেছে। এদের কেউ কিন্তু মিসিং নেই। এগুলো ফেসবুকে ফলাও করে নিখোঁজ করে প্রচার করা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ গুজব।’

ওসিদের প্রসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমি কখন কোন থানায় যাব, কোন থানার ওসিকে আমার গাড়িতে করে তুলে নিয়ে চলে আসব এর ঠিকানা নাই। সিএমপির ১৬ থানার ওসিদের কেউ যদি অপকর্ম করে তার দায় তাকেই নিতে হবে। সেই দায় আমি নিব না। আমি দুষ্টু গরু রাখবো না, শূন্য গোয়াল থাকবে আমার। এটা আমি নিশ্চিত করতে চাই। আমার মেসেজটা অলরেডি আমার থানার ওসিদের কাছে পৌঁছে গেছে। তাদের কাছে আমার প্রথম মেসেজ হচ্ছে—কি করা যাবে না। কোনটা করতে হবে সেটা এখনো বলিনি। সামনে আমাদের একটি ১০ তারিখ প্রোগ্রাম আছে সেখানে বলা হবে। আমি সেদিন আমার কি চাওয়া সেটি জানাব। আমি আমার যে চাওয়া সেটি প্রতিষ্ঠা করে ছাড়বো। আমার চাওয়ার সঙ্গে আপনাদের চাওয়া মিলবে, আমি নিশ্চিত।’

সিএমপি গণমানুষের ছিল, এখন সেটি আর নেই— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এটা শিউর করতে পারি যে, অন্ততপক্ষে আমার কার্যালয় থাকবে ওপেন, কোন দরজা থাকবে না। চার জোনের ডিসির দরজা ওপেন থাকবে। আমি এই পাঁচটা জায়গা এখন ওপেন করে দিচ্ছি। যখনই আসেন তখনই আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। আপনারা যে ধরনের সহযোগিতা চান অন্তত আমি কমিশনার এটি নিশ্চিত করছি আপনাদেরকে সহযোগিতা করব। আর আপনাদের গেইটের ঢোকার সময় কি সমস্যা হয় না হয় সেটি আমি দেখব। দরকার হলে আমি গেইটও রাখবো না।’

‘আপনারা দোয়া করবেন আমি যতদিন এখানে থাকি অন্তত কিছু মানুষের সেবা যেন করতে পারি। ওই তেলের মাথায় তেল আমি ঢালতে যাব না। ওই অসহায় মানুষটার মাথায় তেল দিতে চায়। যে মানুষটার আসলেই দরকার। আমি এই কাজটাই করব। আমি আশা করব অন্য কেউ থাকুক আর না থাকুক, গুটিকয়েক সাংবাদিক সবসময় আমার সাথে থাকবে। এটা আমি বিশ্বাস করি। কারণ ভাল কাজে সঙ্গ পাওয়া কিন্তু অনেক কম। আর আমার যদি কোন কাজে ভুল হচ্ছে মনে হয়, তাহলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিয়ে জানাবেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ নগর আপনাদের শহর। এটা আমরা সুন্দর একটি শহর হিসেবে করতে চাই। সেটি আমি একা পারব না আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। আমি চাই প্রতি তিন মাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে বসতে।’ বলেন কমিশনার।

কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে নবাগত কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে এসে শুনেছি কিশোর গ্যাংয়ের কথা। এটা নিয়ে আমি এসেই কাজ শুরু করেছি এবং আমার একটা ওয়ে তৈরি করব, আমি প্রথমে কলেজ ইউনিভার্সিটি গুলোতে প্রোগ্রাম করব। আমার ধারণা দু-একটা প্রোগ্রাম করার পরে কলেজ বা ভার্সিটির সঙ্গে থাকে তারা আর থাকবে না। অভিভাবকদের প্রতি এমন একটা অনুরোধ থাকবে— আপনার সন্তান কোথায় যায় না যায় তা দেখেন। যদি আমি তাকে থানায় নিয়ে আসি তাহলে তার ক্যারিয়ারটা নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ বলবে, সে একটা খারাপ মানুষ। আমি চাইনা তার গায়ে একটা কালিমা লাগুক।’

মাদকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। এ কয়দিন আমরা যে পরিমাণ মাদক উদ্ধার করতে পারছি, এটাকে আমি একটা নেগেটিভ ভাবে দেখি। মাদক উদ্ধার বেশি মানে এখানে মাদকসেবীর সংখ্যা বেশি। মাদক উদ্ধার বেশি হলে এটা অনেকে পজেটিভভাবে দেখে আমি কিন্তু নেগেটিভ ভাবে দেখি। মাদক উদ্ধার মানেই মাদকের এখানে ডিমান্ড রয়েছে। এটি নিও আমরা কাজ করব।’

পুরোনো সাধারণ ডায়েরি নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে কমিশনার বলেন, ‘আমি প্রথমেই জিডি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সমস্ত জিডি নিয়ে এসেছি আমি। এরমধ্যে দুইটা জিনিস—ব্যক্তি নিখোঁজ এবং মোবাইল হারানো ডায়েরি। যত পুরোনো জিডি আছে আমি খুঁজে বের করতে বলেছি। সেগুলো কে তদন্ত করছে, কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে। যদি পুরোনো কোনো জিডির মোবাইল উদ্ধার না হয়ে থাকে তাহলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চুরি অথবা ছিনতাই—কি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আমি জানতে চেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি চাই মামলা বাড়ুক। না হলে কিন্তু আমি আইডেন্টিফাই করতে পারবো না। মামলা না হলে কিন্তু রেকর্ড তৈরি হয় না যে একটা ছিনতাই হয়েছে বা খুন হয়েছে। যখন প্রতিমাসে মামলা আসবে তখন আমরা খবর নিতে পারব এটার কি অবস্থা। আমি শুধুমাত্র মামলা না প্রতিটা বিষয়ে লাইবেলিটি নিয়ে আসছি। একটা ছোট্ট জিডি একটা মানুষ হারিয়ে গিয়েছে, সেটিও আমি জবাবদিহি করব। যখন আমি জিডি নিয়ে কাজ শুরু করছি তখন নিখোঁজ লোকগুলো পেয়ে গেছি এবং মোবাইল উদ্ধারের যে জিডি, সেগুলো এখনো পাইনি। একটা দুটো না কয়েকশো মোবাইলের জিডি হয়েছে। যাদেরকে ইনকোয়ারির দায়িত্ব দিয়েছে তারা কি করেছে এটা কেন পায়নি তাদেরকে আমরা এটা নিয়ে কাজ দিব।’

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মাসুদ আহাম্মদসহ সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *