দেশজুড়ে

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ৬ দফা দাবিতে গণ-অবস্থান

তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে চলতি অর্থবছরেই পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবিতে নদীর দুই তীরে গণ-অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে দুই ঘণ্টাব্যাপী একযোগে তিস্তা অববাহিকার ১১০টি পয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।

এতে হাজারো মানুষ অংশ নেন।

গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্যের পাশাপাশি গণসংগীত, কবিতা, নাট্যাংশ মঞ্চায়নসহ তিস্তাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবনচিত্র তুলে ধরা হয়। এ সময় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার প্রদর্শন করেন নদী পাড়ের মানুষজন।

সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, প্রতিবছর তিস্তাপাড়ে ১ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। ২০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছেন। জীবন-জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। কৃষি-কৃষক লণ্ডভণ্ড হচ্ছে। অথচ কোনো সমাধান হচ্ছে না। আমরা কোনো ভূ-রাজনৈতিক দ্বৈরথ দেখতে চাই না। আমরা চাই চীনের সমীক্ষা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত তিস্তা মহা-প্রকল্পের কাজ চলতি অর্থবছর থেকেই শুরু করা হোক। আমরা আশা করি চীন ফেরত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা দেবেন।

এখন ভারত থেকে নতুন করে সমীক্ষার কথা বলা। আমরা ভারত-চীনের রশি নিয়ে টানাটানি দেখতে চাই না। প্রয়োজনে তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে পদ্মা সেতুর মতো দেশের টাকায় তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, দেশের অন্য অংশে ৪ লাখ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। কিন্তু উত্তরাঞ্চলে কোনো মেগা প্রকল্প নেই। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে তিস্তা কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করবেন। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহা-প্রকল্পের কাজ শুরুর ঘোষণা দেবেন। এটা এই অঞ্চলের ২ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা বাঁচানোর প্রকল্প। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে। তা করা না হলে রাজপথ, নৌপথ-রেলপথ অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন হবে।

তিস্তা নদী বেষ্টিত রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা অববাহিকার দুপাড়ে গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়ে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

কর্মসূচি থেকে বক্তারা তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মতভাবে ‘তিস্তা মহা-পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন, অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদীতে সারা বছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধার নির্মাণ, তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপশাখাগুলোর সঙ্গে নদীর আগেরকার সংযোগ স্থাপন ও নৌযান চলাচল পুনরায় চালু করা, দস্যুদের হাত থেকে অবৈধভাবে দখলকৃত তিস্তাসহ তিস্তার শাখা-প্রশাখা দখলমুক্ত করার দাবি জানান।

নদীর বুকে ও তীরে গড়ে ওঠা সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বক্তারা।

এছাড়াও তিস্তা ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, নদী ভাঙনের শিকার ভূমিহীন, গৃহহীন ও মৎস্যজীবীদের নদী ভাঙনে উদ্বাস্তু মানুষের পুনর্বাসনের দাবি জানান। তিস্তা মহা-পরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তীরবর্তী কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক কলকারখানা গড়ে তোলা এবং মহা-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তাপাড়ের মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করারও দাবি জানান তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *