শূন্য থেকে কোটিপতি ইসমাইল
চাকরি-বাকরি নেই। বেকার জীবন। অভাবের সংসার। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না ইসমাইল। সন্দ্বীপের হরিশপুরের বাসিন্দা তিনি। তখন পাশে এসে দাঁড়ান উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা। তাকে পরামর্শ দেন উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে মৎস্য চাষে প্রশিক্ষণ গ্রহণের। যথারীতি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি বিআরডিবি পরিচালিত ‘হরিশপুর বামনারপুল বিত্তহীন সমবায় সমিতির সদস্য হন। প্রথমবার তিনি ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সেই টাকায় মৎস্য চাষ শুরু করেন। মৎস্য চাষে আট হাজার টাকা লাভ করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
মো. ইসমাইল বলেন, এক যুগ আগে জীবন যুদ্ধ শুরু করি। আমার এবং আশেপাশের এলাকার কয়েকজন জমির মালিকের কাছ থেকে ৪টি পুকুর ইজারা নিয়েছি। পুকুরের ধরন অনুয়ায়ী প্রতিটি পুকুরে আধুনিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছি। এই পুকুরগুলো দেখার জন্য ২জন কর্মচারী রয়েছে। এখান থেকে বছর শেষে মাছ বিক্রি করি প্রায় ৭৫ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকার।
তিনি আরো বলেন, আমি প্রথমে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) বিত্তহীন সমবায় সমিতি ‘হরিশপুর বামনারপুল বিত্তহীন সমবায় সমিতি’র সদস্য হই। তারপর সেখানের সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠি। এখন বর্তমানে আমি সমিতির ম্যানেজার। সমিতিতে এখন আমার শেয়ার জমা ১০ হাজার ২৩০ টাকা এবং সঞ্চয় জমা আছে ৪০ হাজার ২৬০ টাকার। প্রথমবার ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে সেই টাকায় মৎস্য চাষ শুরু করি। তারপর থেকে আমাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি। এখন আমার সব মিলে প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি সম্পদ আছে। যার সবই আমার কষ্টার্জিত পরিশ্রমের আয়। আমি ভিটেবাড়িসহ প্রায় ২০ শতক জমি ক্রয় করি। ছোট তিন ভাইয়ের জন্য ১৮ শতক ভিটেমাটিসহ জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। পাশাপাশি ১টি এতিমখানা, ১টি মসজিদ এবং ১টি ফোরকানিয়া মাদ্রাসা আমার অর্থায়নে চলে। মাদ্রাসায় অসহায় ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে পড়ালেখার ব্যবস্থা করি। এনজিও এবং জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় শতভাগ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা ও ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করছি। বাড়ির লোকজনের সুবিধার্থে পাকা রাস্তা করে দিয়েছি।
এখন তার গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, উঠোন ভরা হাঁস-মুরগি, কবুতর, মাঠ ভরা শাকসবজি-ফসল আবার দুটি ফ্রিজ ও ইলেক্ট্রনিকের দোকানের মালিক তিনি। এলাকায় সবার কাছে এখন তিনি অনুকরণীয়। তার প্রতিষ্ঠান ও খামার বাড়িগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ জনের। নিজ এবং পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের চাহিদা মিটিয়ে এখন তিনি পরিচালনা করেন মাদরাসা, মক্তব ও এতিমখানা।