জাতীয়

হত্যা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে শাহবাগ অবরোধ

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ছাত্রসহ বিভিন্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার নাগরিক। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের বাড়িঘর-মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হামলা, লুটপাটের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছে অবরোধকারীরা।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে প্রতিবাদী ব্যানার, ফেস্টুন ও উপদেষ্টাদের ছবিসহ প্ল্যাকার্ড নিয়ে হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীরা শাহবাগে জড়ো হতে থাকে।

‘সেভ দ্য হিন্দুস’, ‘আমারও তো রক্ত লাল-সইব আর কতকাল’ ‘আমার ভাই মরল কেন, জবাব চাই’, ‘আমার মন্দির-আমার বাড়ি লুটপাট কেন জবাব চাই-জবাব চাই’—এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তারা প্রতিবাদ জানাতে থাকে। স্লোগানের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে তারা বক্তৃতা করতে থাকে। এরপর ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সেখানে জড়ো হন সনাতনী সম্প্রদায়ের জনগণ। আস্তে আস্তে সমাবেশ বাড়তে থাকে।

এক পর্যায়ে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ মোড় থেকে চারি দিকে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে। রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলছিল।
এদিকে বিকেল ৫টার দিকে একটি বড় মিছিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সেখানে মিলিত হয়।

এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক, বাংলাদেশ সনাতনী সচেতন ছাত্রসমাজ, সনাতনী শিক্ষার্থী ঐক্য এবং সুধীসমাজের নাগরিকরা। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির, প্রতীমা, হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু মা-বোনদের ধর্ষণ করা হয়। দেশত্যাগের হুমকি দেওয়া হয়। রাতের আঁধারে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

বিগত দিনে হওয়া হিন্দু নির্যাতনের কোনো বিচার না হওয়ায় নির্দ্বিধায় এই নারকীয় কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ সময় চয়ন পাল নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর যেভাবে অত্যাচার-নিপীড়নসহ মন্দির ভাঙচুর করা হয়, এটার প্রতিবাদ জানানোর জন্যই আমরা আজকে এখানে সবাই একত্রিত হয়েছি। ’ বিভিন্ন স্থানে মন্দির, প্রতীমা, হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেন তিনি।

সুজন দেবনাথ নামের আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষার্থীরা বৈষম্য নিরসনে আন্দোলন করছেন, আর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর তাঁর গ্রামের বাড়িতেই লুটপাট চলছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এতে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। আমরা আশা করব, দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান। ’

নির্যাতন বন্ধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি

সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বন্ধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি দীপংকর শিকদার দীপু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক অনুপ কুমার দত্ত, সিনিয়র সহসভাপতি গৌরাঙ্গ লাল মণ্ডল কেন্দ্রীয় মুখপাত্র সাজন কুমার মিশ্র, সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশিস সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় দে সঞ্জয়, বাসুদেব গুহ, দপ্তর সম্পাদক মুকুল ঘোষ, সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার, রূপম সরকার, যুব পরিষদের সভাপতি মনীষ বালা, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন কুমার শিপু, নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি উত্তম কুমার সাহা প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *