সেই ফোরকানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক হিসাব রক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ ফোরকানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক হিসাব রক্ষক মোহাম্মদ ফোরকান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মুন্সি ফররুখ হোসাইন মিন্টু ওরফে মুন্সি ফারুক, তার সহোদর মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন এবং প্রতিষ্ঠানটির স্টাফ মুকিত মন্ডল। দুই ভাইয়ের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র সৃজন করে তা খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে সরকারের ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাত চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ‘কমিশনের নির্দেশে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জন্য মেসার্স আহম্মদ এন্টারপ্রাইজ ৮টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর, ৮টি আইসিইউ বেড এবং ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর বাবদ মোট ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। কিন্তু যাচাইবাচাইকালে ত্রুটি থাকায় এসব যন্ত্রপাতি গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। অর্থও পরিশোধ করেনি। মালামাল ত্রুটি ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের কারণে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর একটি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলাটি তদন্তেও অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়। যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে ব্যয় মঞ্জুরিপত্র চেয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি চিঠি দেন। কিন্তু এরপরও মন্ত্রণালয় থেকে কোন ব্যয় মঞ্জুরিপত্র প্রদান করা হয়নি। এরমধ্যে ২০২২ সালে ২৬ জুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মুন্সি ফারুকের সহোদর ভাই মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন তার হোয়াটসএপ নম্বরে থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত চিফ একাউন্ট এন্ড ফিন্যান্স অফিসার বরাবর একটি ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাব রক্ষক মোহাম্মদ ফোরকানের মোবাইল নম্বরে প্রেরণ করেন। ফোরকান ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্রটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের মোবাইলে ফরোয়ার্ড করে দেন।
এছাড়াও ২০২২ সালের ২৮ জুনে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরি সৃজন করে তত্ত¡াবধায়কের একক স্বাক্ষরে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার একটি বিল প্রস্তুত করেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ অফিস বিলটি যাচাই বাছাইকালে অর্থ বরাদ্দ পত্রের পৃষ্ঠাঙ্কন না থাকা, বরাদ্দপত্রটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় না আসাসহ সার্বিক পর্যালোচনায় ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং বিলটি বাতিল করেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের জুন মাসে ওই ঘটনার পর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।