জাতীয়

১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা

যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান।

গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন ৷ শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাতে তার ভেরিফাইড ফেসবুকে শেখ হাসিনার এই বার্তাটি পোস্ট করেন।

বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ভাই ও বোনেরা, ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একইসঙ্গে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা, আমার তিন ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা, ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার ছোট ভাই যার বয়স মাত্র ১০ বছর ছিল শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার একমাত্র চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু শেখ নাসের, রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন, পুলিশ অফিসার সিদ্দিকুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, কৃষিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সারনিয়াবাদ, তার ১০ বছরের ছেলে আরিফ ১৩ বছরের মেয়ে বেবি, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, ভাইয়ের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক শহীদ সারনিয়াবাদ, ভাগনে রেন্টুসহ অন্যান্য অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৫ই আগস্ট যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শহীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

তিনি বলেন, গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে যে নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ এমন কি অন্তঃসত্তা নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সেবী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমার মতো যারা বেঁচে আছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমি এই হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সাথে জড়িতদের যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিল স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই বাড়িতে এসেছেন। স্বাধীনতার স্মৃতি বহনকারী এই জাদুঘরটি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সব ব্যথা বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়ে প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সেবা করে যাচ্ছি। তার শুভ ফল ও আপনারা পেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আজ তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আর যে স্মৃতিটুকু আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। চরম অবমাননা করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি, আত্মপরিচয় পেয়েছি, স্বাধীন দেশ পেয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছে। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই।

শোক দিবস পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যথাযথ মর্যাদার সাথে ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ই আগস্ট পালন করুন। বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত করে সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *