দেশজুড়ে

লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে পানি, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) থেকে বৃষ্টি না হলেও বাড়ছে পানি। পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরের লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ছে। এতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছে স্থানীয় লোকজন।

লক্ষ্মীপুরে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তবে গত দুই ধরে বৃষ্টিপাত না হলেও পানির উচ্চতা বাড়তে থাকে। ফলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার সদর উপজেলার পৌর এলাকা, মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ, উত্তর জয়পুর, দত্তপাড়া, চরশাহী, কুশাখালী, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, বাঙ্গাখা, পার্বতীনগর, টুমচর ইউনিয়ন এবং জেলার কমলনগরের চরকাদিরা ও রামগতি চর বাদাম, চর পোড়াগাছা ইউনিয়ন, রায়পুর এবং রামগঞ্জ উপজেলাতে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গৃহবধূ কাজল বেগমের ঘরে ভেতর হাঁটু সমান পানি। খাটের ওপরও পানি উঠে গেছে। তাই পরিবারের চার সদস্যদের নিয়ে উঠেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকায়। তিনি আশ্রয় নিয়েছেন পৌর আইডিয়েল কলেজের ভবনে।

কাজল বেগমের মতো ১৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিদ্যালয়টিতে। তাদের সবার বাড়ি পৌরসভার ২ নম্বর এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। পৌর আইডিয়েল কলেজে ছাড়াও স্থানীয় একটি মহিলা মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক পরিবার।

আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে জেসমিন, নয়ন ও রিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সব ডুবে গেছে। ঘরের মধ্যে হাঁটুর ওপর পানি। থাকার মতো অবস্থা নাই। পরিবারের শিশু সন্তানদের নিয়ে ভয়ে ছিলাম। রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই বাধ্য হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসছি।

তারা আরও বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রে কেউ কেউ শুকনো খাবার দিয়ে যাচ্ছে। তবে চাল না থাকায় ভাত রান্নার ব্যবস্থা ছিল না। শুকনো খাবার খেয়েই কোনোমতে দিন পার করছি।

পৌর এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সবুজ বলেন, ঘরের ভেতরে হাঁটু পানি। ঘরের সামনে কোমর পানি। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। আমাদের আশেপাশের প্রায় প্রত্যেকের ঘরে পানি উঠে গেছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। বৃষ্টি নেই, কিন্তু দিন দিন পানি বাড়ছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের বাসিন্দা শারমিন ও জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বসতঘরের সামনে হাঁটু পানি। ঘরে এখনও ঢুকেনি। তবে যেভাবে পানির উচ্চতা বাড়ছে, যে কোনো সময় ঘরে পানি ঢুকতে পারে। বাড়ির আশপাশে সাপের উপদ্রব্য বেড়েছে। শিশু সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে আছি।

তারা আরও জানায়, তাদের আশপাশের অনেক বসতঘরে পানি উঠে গেছে। তারা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। রান্নার চুলো পানির নিচে তলিয়ে থাকায় খাবারের যোগান দিতে পারছেন না তারা। সব মিলিয়ে মানবেতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

চন্দ্রগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও সাংবাদিক মোহাম্মদ হাসান বলেন, চন্দ্রগঞ্জ এবং উত্তর জয়পুরসহ আশপাশের গ্রামীণ জনপদ তলিয়ে গেছে। কারো ঘরে পানি উঠেছে। কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *