বস্তাপ্রতি ১০০-২০০ টাকা বেড়েছে চালের দাম
বাড়তি দামের মধ্যে আবারও বাড়ল চালের দাম। বন্যা পরবর্তী সময়ে বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এরমধ্যে বন্যায় ত্রাণ হিসেবে চাহিদা বাড়ায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম।
ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় বেশকিছু ধানের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকদিন পর ধান ঘরে তোলার কথা ছিল কৃষকদের, কিন্তু আউশ ধান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তাতে দাম বেড়েছে ধানের। এর প্রভাব পড়েছে চালেও।
তবে কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে আউশ ধান খুব বেশি চাষ হয় না, তাও আউশ ধান ঘরে তোলার কথা মাস খানেক পর, তাই এখনই ধান নষ্টের প্রভাব চালের দামে পড়ার কথা না।
অবশ্য ভোক্তাদের দাবি, চট্টগ্রাম ও আশেপাশে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ হিসেবে বিতরণের কারণে মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোটা চালসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে চার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
গতকাল নগরীর চাক্তাই চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে পাইকারি চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা মোটা চাল ২১শ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগেও প্রতি বস্তা ১৯শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। সে হিসেবে বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪ টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিআর আটাশ চাল ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ৩১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগেও এই চাল তিন হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়েছে নাজিরশাইল, মিনিকেট ও স্বর্ণা চালেরও।
৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা মিনিকেট ৩৪শ টাকা, ২৫ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা নাজিরশাইল ১৫৩০ থেকে ১৬৫০ টাকা এবং ২৫ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা স্বর্ণা ১৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের শেষ সময় পর্যন্ত কেজিতে ২-৩ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল এসব চাল।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ‘মূলত ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে। তাছাড়া ত্রাণে মোটা চালের চাহিদার কারণে দাম বেড়েছে। তবে ধানের দাম এখন কমতির দিকে, চালের দামও কমে যাবে।’
চাক্তাই রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বন্যায় মাঠে বেশকিছু ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ধানের দাম বেড়ে গেছে। প্রতিকেজি ধানের দাম মানভেদে দেড় থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে চালের দাম বাড়তি।’
তবে এখনই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ধানের প্রভাব বাজারে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আউশ-আমন মিলে বীজতলাসহ রোপা ধান ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ২৮৭ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ১৫ হাজার ৯৫৮ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ১৫ হাজার ৫১৮ হেক্টর জমির ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আউশ ধান দেশে বেশি চাষ হয় না। আর আমন ধান ঘরে আসার কথা ডিসেম্বরে। ধানের ক্ষতির প্রভাব এখনই বাজারে পড়ার সম্ভাবনা নেই। আর যেসব কৃষকের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা অন্যান্য এলাকার সঙ্গে সমন্বয় করে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করছি।