চট্টগ্রাম

লালদিয়ার চরে চোখ ভূমিদস্যুদের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে একদল সুবিধাভোগী নেমেছে দখল ও লুটপাটে। তাদের কুনজর থেকে বাদ যায়নি চট্টগ্রাম বন্দরও। সাড়ে তিন বছর আগেও যে জায়গা দখলমুক্ত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ আওতায় নিয়েছিল, সেই লালদিয়ার চর আবারও দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে কিছু দুষ্কৃতিকারী ও ভূমিদস্যু।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও পট পরিবর্তনের সুযোগে কিছু ভূমিদস্যু এবং দুষ্কৃতিকারী চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন এবং দখলীয় লালদিয়ার চর এলাকায় বলপূর্বক অবৈধ অনুপ্রবেশ করে কিছু কাঠামো নির্মাণ চলমান রেখেছে। তাদের ওই এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিলে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে এবং বিভিন্ন হুমকি ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে ওই জায়গায় থাকা বন্দরের বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ও লোহার গেট লুটপাট করে অবৈধ জনরোষ তৈরিতে লিপ্ত রয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, দুষ্কৃতিকারী ও অবৈধ দখলদারদের তাদের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য ইতোমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সতর্ক করা হয়েছে। এ কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সতর্কীকরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ওই রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আবার দখলের চেষ্টা আদালত অবমাননার শামিল। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন ও দখলীয় পূর্ব পতেঙ্গা মৌজাস্থ লালদিয়ার চর এলাকা চট্টগ্রাম বন্দরের ‘দি চিটাগং পোর্ট এক্ট ১৯১৪’ এর ৩য় তফসিলভুক্ত জমি। নদীর তীরবর্তী উক্ত এলাকা চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ হিন্টারল্যান্ড কানেক্টিভিটির ভূমিকা পালন করে। ওই এলাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৯০৮ সালে অধিগ্রহণ করে যা চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে ন্যস্ত ছিল। তবে কিছু স্থানীয় সাধারণ জনগণ কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ও ভূমিদস্যুর প্ররোচনায় ওই এলাকার প্রায় ৭৮ একর জমি অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালে হাইকোর্টে রিট করে। ওই মামলা চলতে চলতে ২০১৯ সালে রায় বন্দরের পক্ষে যায় এবং আদালত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে ওই জায়গা দখলমুক্ত করে চট্টগ্রাম বন্দরকে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশনা দেয়।

তারই প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লালদিয়ার চরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বন্দরকে সহযোগিতা করে। এরই প্রেক্ষিতে আগাম ঘোষণা দিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই জায়গার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

পরে ১ থেকে ৩ মার্চ প্রয়োজনীয় জনবল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় লালদিয়ার চর এলাকা পুনরুদ্ধার করা হয়। এরপর ওই জায়গা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে মাটি ভরাট করে সমতলে রূপান্তর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এমনকি ওই জায়গার সীমানা দেয়ালও তৈরি করা হয়। কিন্তু ওই জায়গায় আবারও দখলদারদের নজর পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *