দক্ষিণে বিএনপির নেতৃত্বে শেখ মহিউদ্দিন-এনাম!
এস আলম গ্রুপের বিলাসবহুল গাড়িকাণ্ডে বিলুপ্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের তোড়জোড় চলছে। তবে ‘মাই ম্যান’ নেতৃত্ব আনার জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন স্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে কমিটি গঠনের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। লন্ডন থেকে তারেক রহমানের বার্তা পেলেই কমিটি ঘোষণা করা হবে— এমন গুঞ্জন এখন ‘টক অব দ্যা চট্টগ্রাম’।
দলের একটি সূত্র বলছে, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে সভাপতি এবং আলোচিত গাড়িকাণ্ডে বহিস্কৃত সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দলের দুঃসময়ে মাঠ চষে বেড়ানো এনামুল হকের পিছু নিয়েছেন পটিয়ার সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল। যার কারণে এনামুল হকের কমিটিতে নাম লেখানোর পথ ততটা মসৃণ নয়।
সূত্রটি বলছে, দলের দুঃসময়ে একটি পক্ষ যখন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ‘লিঁয়াজো’ করে সদর্পে দেশ-বিদেশ বেড়িয়েছেন ঠিক ওই সময়ে শেখ মহিউদ্দিন ও এনামুল হক ‘পিঠ’ লাগিয়ে রাজনীতির মাঠ চষেছেন। কখনো আড়ালে থেকে কখনো সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘চক্ষুশুল’ হয়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। এসব দিক বিবেচনায় এনামুল হক এনামের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকেও নতুন নেতৃত্বে রাখা হতে পারে।
এদিকে দক্ষিণের দলীয় রাজনীতিতে আর ‘ইন্টারেস্টেড’ নন এস আলমকাণ্ডে বহিস্কৃত দক্ষিণ জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। জানতে চাইলে তিনি সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘দক্ষিণে ডেপুটেশনের একটা প্রস্তাব ছিল। কিন্তু আমি দক্ষিণের কোনো দায়িত্ব নিতে আর ইন্টারেস্টেড নই।’
দক্ষিণে নেতৃত্বে আসার দৌড়ঝাঁপে রয়েছেন আরো ডজন খানেক নেতা। তাঁরা হলেন, আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোছাইনী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, জেলা কমিটির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আজিজুল হক, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস ও সাবেক সহসভাপতি ইদ্রিছ মিয়া। এছাড়া সদস্য সচিব পদে আলোচনায় আছেন লোহাগাড়া বিএনপির আহ্বায়ক, জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি নাজমুল মোস্তফা আমিন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসহাব উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা প্রমুখ।
লোহাগাড়া বিএনপির সিনিয়র সদস্য আবুল হাসেম সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘শিগগিরই দক্ষিণের কমিটি দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি কাদের নিয়ে কমিটি হচ্ছে। আগের কমিটিগুলোর জন্য বিভিন্ন তদবির হতো। তবে এখন সেই অবস্থা নেই। কমিটি কেন্দ্র থেকে হলেও সর্বোপরি খবরাখবর নিয়েই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যোগ্যদের নেতৃত্বে আনবেন।’
পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ হাসান সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘এনাম ভাই ত্যাগী নেতা। দলের দুঃসময়ে ছিলেন। শিগগিরই দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি হবে। আমাদের আশা, সম্প্রতি গাড়িঘটনার কারণে এনাম ভাইয়ের বিরুদ্ধে দলীয় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে; তা অবশ্যই প্রত্যাহার করা হবে। আর নতুন কমিটিতে তাকেই (এনাম) সভাপতি করা হবে।’
‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ওই গাড়িঘটনা ছাড়া উনার (এনাম) বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ নেই। উনি দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তিনি অনেক ত্যাগ-তীথিক্ষা স্বীকার করেছেন। উনার ত্যাগ আছে, শ্রম আছে, মেধা আছে, সময় আছে; বহুকিছু আছে।’ — যোগ করেন বিএনপির এ নেতা। তার মতে, গাড়ির ঘটনাটি সত্য নয়, পুরোটাই মিথ্যা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণের তৃণমূল বিএনপিকর্মী ও ব্যবসায়ী আবু বক্কর মেহেদী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন একজন কর্মীবান্ধব নেতা। তার আছে ক্লিন ইমেজও। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তিনি দায়িত্ব পেলে অতীতের মতো বিএনপি ফের চাঙা হয়ে ওঠবে দক্ষিণে।’
দক্ষিণের বিএনপির কমিটি প্রসঙ্গে কথা বলতে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁরা কেউ সাড়া দেননি। কমিটিতে আলোচনায় থাকা এনামুল হক এনামের সঙ্গেও একাধিকবার যোগাযোগ করে সাড়া মেলেনি।
আলোচনায় থাকা অন্যজন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দল যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই নেতৃত্বে বসাবে। ১৯৭৯ সাল থেকে দলের সঙ্গে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যখন আমি মহসিন কলেজে ভর্তি হই; তখন থেকেই ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করেছি। এরপর থানা ছাত্রদলের সভাপতি, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছি।’
তৃণমূলের কর্মীদের সাথে তার ‘নাড়ির সম্পর্ক’ জানিয়ে অধ্যাপক মহিউদ্দিন বলেন, ‘দক্ষিণ জেলার উপজেলা এবং পৌরসভার একদম তৃণমূলকর্মীদের সাথে আমার নাড়ির সম্পর্ক। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে নতুন কমিটিতে দায়িত্ব দেয়; তাহলে আমি তাদের (তৃণমূল কর্মী) নিয়েই দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করবো। এটাই আমার ভিত।’
আগামীতেও দলের যেকোনো দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে থাকবেন জানিয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘অনেকে দীর্ঘদিন মাঠে ছিলেন না, আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না, মামলা-মোকাদ্দমায় ছিলেন না। কিন্তু সুসময়ের অতিথি হতে এসেছেন! অথচ আমাদেরকে ফ্যাসিস্ট সরকার ২০১৭ সালে গুম পর্যন্ত করেছিল। জনগণ ও নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় মাঠে ছিলাম। আগামীতেও দলের যেকোনো দুঃসময়ে পরিস্থিতি মেনে নিয়েই পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ। সেকারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও আমাদের পছন্দ করেন।’
দল যেভাবেই বিবেচনায় রাখবে সেভাবেই খুশি জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, ‘দল যদি অন্য কাউকে যোগ্য মনে করে নেতৃত্বে বসায় এবং আমাকে যদি শুধু সদস্য হিসেবেও রাখে; এতেও আমার কোনো সমস্যা নেই। দলের জন্য কাজ করতে চাই। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাই সবাই একহয়েই কাজ করতে হবে। আমার কাছে দলটাই বড়, ব্যক্তি নয়। একইসঙ্গে আমার কাছে পদ বড় নয়, দলই বড়।’
নতুন কমিটিতে যদি দায়িত্ব পান তাহলে তৃণমূল থেকেই দলের শক্তিশালী রূপ গঠনের কাজ করার কথা জানিয়ে শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘আগামীর রাজনীতি হচ্ছে মেধাভিত্তিক রাজনীতি; আগামীর রাজনীতি হবে উন্নয়নের রাজনীতি। আমাদের ছাত্র আন্দোলনের ওপর বেশি গুরুত্ব থাকবে।’