‘রাজাকার’ স্লোগানে আবারও প্রকম্পিত ঢাবি
শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’ শব্দকে উপেক্ষা করে গত ১৪ জুলাই ‘তুমি কে, আমি কে—রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে উত্তাল হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দুই মাস পর সেই স্লোগান দিয়ে ফের বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে থেকে বৃষ্টির মধ্যেই মিছিল নিয়ে বের হন একদল শিক্ষার্থী। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন হল ঘুরে মুহসীন হল, নীলক্ষেত মোড়, ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসে।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরচার’, ‘ঢাবির মাটি, রাজাকারের ঘাঁটি’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমাদের ইতিহাস, বিকৃতি চলবে না; স্বাক্ষী আছে জনতা, বিকৃতি চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক এবি জুবায়ের বলেন, খুনি হাসিনা যখন আমাদের রাজাকার বলেছিল তখন জ্বলে উঠেছিল ঢাবিসহ পুরো বাংলাদেশ। কিন্তু এখন কিছু লোক শিক্ষার্থীদের প্রাণের রাজাকার স্লোগান বদলে ফেলার চেষ্টা করছে। যেই স্লোগানে পুরো বাংলাদেশ জলে উঠেছে, সেই স্লোগান নিয়ে এতো হীনমন্যতা কেন? আমাদের চোখে দেখা ইতিহাস বিকৃত হলে ৭১ এর ইতিহাসের কী করে বিশ্বাস করব!
যারা ২৪ এর ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করছেন তাদের ভুল শিকার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ২৪ এর বিপ্লবের প্রতিটি চিহ্ন বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব।
একদল লোক গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিচিহ্ন মুছে দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক মুসাদ্দিক ইবনে মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, খুনি হাসিনা রাজাকার ট্যাগ দিয়ে বিরোধী দলের উপর নির্যাতনের রোলার চালিয়েছে। এই রাজাকার স্লোগান হাসিনাকে ইতিহাসের ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত করেছে।
উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের পর গত ১৪ জুলাই এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও কোটা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?
শেখ হাসিনার এই মন্তব্যের পরেই বিক্ষোভে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সে সময় ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে মুখরিত হয় ঢাবি ক্যাম্পাস। তারপর ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে।
এই ১৪ জুলাইকে স্মরণ করে ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ফেসবুকে একটি স্টাটাস দেন। একই বিষয়ে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, নুসরাত তাবাসসুম, চট্রগ্রাম বিশ্যবিদ্যালয়ের রাফি ফেসবুকে স্টাটাস দেন।
তাদের সবার ফেসবুক পোস্টে ‘কে রাজাকার? কে রাজাকার? তুই রাজাকার, তুই রাজাকার!’ স্লোগানকে তুলে ধরা হয়েছে। আন্দোলনের মূল স্লোগান বাদ দিয়ে অন্য একটি স্লোগানকে প্রতিষ্ঠিত করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।