‘ছাড়’ পেয়েও স্বতন্ত্র শঙ্কায় জাপা
মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে কপাল পুড়েছে দুই নৌকার প্রার্থীর। জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে চট্টগ্রামে দুটি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে চট্টগ্রাম-৫ ও চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা হতাশ হয়ে পড়েন।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও চসিক ১-২নং ওয়ার্ড) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে আসনটিতে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। সালামের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয় দলটি। ২০০৮ সালেও সালাম নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন। সেবারও জাপাকে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
জোটের প্রার্থী হচ্ছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা তিন জাতীয় নির্বাচনে জোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছাড় দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। এর আগেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টির টিকিটে ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালের নির্বাচনসহ তিনবার জয়ী হয়েছিলেন আনিসুল ইসলাম। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম এই আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তবে এই আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. শাহজাহান চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। কেটলি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পূর্বকোণকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও কোন অসুবিধা নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তো আওয়ামী লীগের কেউ নন।
আওয়ামী লীগ ১৯৭৩ সালের পর জয়ের মুখ দেখেনি হাটহাজারী আসনে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী নৌকা প্রতীকে জয় পাননি। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়ে আসছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এম এ সালাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, নিশ্চয় মহান আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন উত্তম পরিকল্পনা ও ফয়সালাকারী। আল্লাহ সবসময় উত্তম ফয়সালা দান করেন। শিগগিরই তোমার রব তোমাকে এত বেশি দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ আংশিক) আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। নোমান আলম মাহমুদ চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নোমান আল মাহমুদ পূর্বকোণকে বলেন, আমি রাজনীতি করি। তাই দল ও নেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে আমি বাধ্য। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ছয় মাসের জন্য সংসদ সদস্য হয়েছি। অল্প সময়ে অনেক কাজ করেছি। আরও অনেক কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই সুযোগ পেলাম না।
জোটের ভাগাভাগিতে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নগর জাপার সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ।
জাপা প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো। মানুষ পরিবর্তন চায়। আমাকে নীরবে ভোট দেবে।
২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মহাজোটের শরিক দল জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদল। নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর মারা যান বাদল।
২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো উপনির্বাচনে এই আসন থেকে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনেও মহাজোটের শরিক দল তরিকত ফেডারেশনকে ছাড় দেওয়ার গুঞ্জন ছিল। বর্তমানে আসনটির সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। তিনি এবার নৌকা নিয়ে নির্বাচন করার গুঞ্জন ছিল। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সংরক্ষিত আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি মাঠে আছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের হোসাইন মো. আবু তৈয়বও মাঠে আছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচনের দৌড়ে রয়েছেন আবু তৈয়ব।
আওয়ামী লীগের দুই শক্ত প্রার্থী ছাড়াও ভোটের মাঠে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, আওয়ামী লীগ ঘেঁষা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির শাহাজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভা-ারী। নজিবুল ও সাইফুদ্দিন চাচা-ভাতিজা।