আনোয়ারাচট্টগ্রাম

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, আনোয়ারায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সদস্যদের অনাস্থা

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ১১ নম্বর জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিসের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইউনিয়নের ৯ জন সদস্য (মেম্বার)। চেয়ারম্যনের প্রতি তারা অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। ফলে জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত দুই বছর ধরে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস মাসিক সভাসহ সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সভা না করেই সভার ভুয়া রেজুলেশন প্রদর্শন এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে কাজ না করেই কাগজে-কলমে উন্নয়ন কাজ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন।

ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ কোনো কাজ না করেই একই কায়দায় তিনি আত্মসাৎ করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত বিভিন্ন ধরনের ত্রাণসামগ্রী নিজের লোকজনকে দিয়েছেন। এছাড়াও নামে-বেনামে ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বিধি-বহির্ভূতভাবে একই বছর একই স্থান দেখিয়ে এলজি এসপি ও হতদরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (কর্মসৃজন) প্রকল্প দিয়ে কাজ না করেই বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। চেয়ারম্যান ইদ্রিস ইউনিয়নের নাগরিক, ওয়ারিশ ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দিতেও অবৈধভাবে নগদ অর্থ গ্রহণ করেন।

জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য রুবি আকতার ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার ইমরান হোসেন চৌধুরী রনি এবং ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ মফিজ বলেন, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস তুঘলকি কায়দায় অনিয়ম-দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছেন। নানা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আমরা সম্মিলিতভাবে গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছি।

অনাস্থা প্রস্তাবে সাক্ষর করেছেন– ইউপি সদস্য কপিল উদ্দীন বাবু, মোহাম্মদ আবছার উদ্দীন, মোহাম্মদ মফিজ, মোহাম্মদ নুরুন্নবী, ইমরান হোসেন চৌধুরী রনি, মো. ফরিদুল আলম, রুবি আকতারসহ অন্য সদস্যদের সমর্থন রয়েছে।

৩ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কপিল উদ্দীন বাবু বলেন, দুই বছরে আমরা পরিষদে গিয়ে বসতেও পারি নাই। চেয়ারম্যান ইদ্রিসের বাহিনী আসলে আমাদের চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ওয়ার্ডবাসী আমাদের নিকট পরিষদের সুযোগ সুবিধা চাই, কিন্তু আমরা দিতে পারি না। আমরা অতিষ্ঠ হয়ে চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন। পরক্ষণে বলেন, আপনি এসবের নিউজে যাইয়েন না আবার। আমি লোক পাঠাচ্ছি। আপনাকে খুশি করবে।

পরবর্তীতে আবার ফোন করে চেয়ারম্যান ইদ্রিস বলেন, আপনাকে এরা কি জবানবন্দি দিয়েছে? এইগুলো আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে দিন, আমি আপনাকে দেখব, সমস্যা নাই!

এই বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমন বলেন, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিসের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাব হাতে পেয়েছি। বিষয়টির সত্যতা তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, অনাস্থার বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের তদন্তের ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান ব্যবস্থা নেবেন। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্টদের জানাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *