চট্টগ্রাম

আওয়ামী সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরপরই বেশিরভাগ মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সরকারের অধীনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে দেখা মিলছে না সাধারণ নাগরিকদের। তবে এরমধ্যে ব্যতিক্রমও আছে।

যেমন বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির সভায় বরিশালে আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান যতীন্দ্রনাথ মিস্ত্রিকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া তিনি নাগরিকদের পাশে থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায়ও কাজ করছেন। তার মতো কার্যক্রম না চালালেও বরিশালের ১০টি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের জনগণের সাথে রয়েছেন।

তবে আওয়ামীপন্থি সিটি ও পৌর মেয়র, কাউন্সিলর এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের দেখা মিলছে না বেশিরভাগ জায়গাতেই, অনেক জায়গাতে তো মেম্বারদের সঙ্গেও দেখা মিলছে না। যেমন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের না পেয়ে বিপাকে রয়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর মুহূর্ত থেকেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবন, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নগরের আওয়ামী পন্থি কাউন্সিলরদের কার্যালয়, স্থানীয় সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাসভবনে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়। এছাড়া উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতেও আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়গুলোতে ভাঙচুর চালানো হয়। বিশেষ করে বিক্ষুব্ধদের দেওয়া আগুনে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবন পুড়ে যায় এবং সেখান থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী নইমুল হোসেন লিটুসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আর এরপর থেকেই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সাথে আত্মগোপনে চলে যান এই শিবিরের জনপ্রতিনিধিরাও। যদিও ছাত্র-জনতা বলছে, যারা নানান অপকর্মের সাথে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে, মানুষকে শাসকের রূপে শোষণ করেছে তারাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

যদিও আত্মগোপনে থানা জনপ্রতিনিধিদের স্বজনরা দাবি করছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরপরই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা টার্গেট করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও তাদের সম্পদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। তাই নিরাপত্তাহীনতার কারণেই অনেকে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে যেমন সাহস পাচ্ছে না। তেমনি কর্মস্থলেও যেতে পারছেন না।

আগৈলঝাড়ার বাকাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিপুল দাসের ভাই মৃদুল দাস সাংবাদিকদের বলেন, সরকার প্রধানের পদত্যাগের পরপরই ৫ আগস্ট আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ের ৫টি কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। নিরাপত্তাহীনতার কারণেই মূলত চেয়ারম্যানরা তাদের পরিষদে যেতে পারছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল দাস জানান, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নাগরিক সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
যদিও দ্রুত স্ব-স্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের তাদের কার্যালয়ে যোগদানের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তবে সিটি ও পৌর মেয়র-কাউন্সিলরদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু বলতে রাজি নন।

জাতীয় সরকারের পতনে স্থানীয় সরকারের অধীনে এসব জনপ্রতিনিধিদের সেবা বন্ধ রাখার কোন বিষয় নেই জানিয়ে বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক আনিছুর রহমান খান স্বপন বলেন, জাতীয় সরকারে পরিবর্তন হয়েছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার পরবর্তী জাতীয় সরকার নির্বাচনে সিডিউল যখন ঘোষণা করবেন। আর তখন যদি মনে করেন। একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা হয়তো করতে পারেন। কিন্তু তার আগে তো মেয়র-কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ট্রেডিশন পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারই ভঙ্গ করেছেন। তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও রাজনৈতিক দলের বিষয়টি যুক্ত করেছেন। যার বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন এখন হয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। বিশেষ করে মেয়র-চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র-চেয়ারম্যানরাও নিজেদের রক্ষায় আত্মগোপনে গেছেন। পলিটিক্যাল দলের বিপর্যয়ের কারণে তারা পালিয়ে যাওয়ায় এখন নাগরিকরা ভুগছেন। কিন্তু যে জায়গাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন তারা কিন্তু ঠিকই আছেন। আবার কাউন্সিলর ও মেম্বারদের মধ্যেও আত্মগোপনে থাকার হার কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *