চট্টগ্রাম

আকবরশাহে পাহাড় কাটার ঘটনায় ৩৯ জনের বিরুদ্ধে ৪ মামলা

ব্যাপকহারে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করায় নতুন করে ৪টি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানাধীন মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি পাহাড় কেটে সমতল করার অপরাধে আকবরশাহ থানায় এই মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর। সেখানকার প্রায় ১৮ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটায় সরাসরি জড়িত ৩৯ জনের বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের রিসার্চ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের নেতৃত্বে সরেজমিনে তিন দিনের পরিদর্শন তদন্ত শেষে আকবরশাহ থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আশরাফ উদ্দিন জানান, পরিবেশ আইন ভঙ্গ করে অবৈধভাবে রাতে-দিনে পাহাড় কাটার খবর পাওয়ার পর আমাদের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত আকবরশাহ এলাকার মিরপুরস্থ জঙ্গল লতিফপুর এলাকাটি পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনকালে জঙ্গল লতিফপুর মৌজার মীর আউলিয়া মাজার সড়কে অন্তত ১০টি পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই এলাকায় ব্যাপক আকারে পাহাড় কাটায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে। আমরা আরো কিছু খবর পেয়েছি। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আরও কিছু মামলা করা হবে।

জানা গেছে, আকবরশাহ থানার জঙ্গল লতিফপুর মৌজার মীর আউলিয়া মাজার রোডে নির্বিচারে পাহাড়/টিলা কর্তন করে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি করে সাগরিকা প্রিন্টার্স নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আমজাদ হোসেন ৯১ নম্বর বিএস দাগে ৮ হাজার ঘনফুট পাহাড় কেটেছে। পাহাড় কাটায় আমজাদ ছাড়াও স্থানীয় মাহফুজ (৫০), আবু বকর সিদ্দিকীর ছেলে আকবরশাহ থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত মহিউদ্দিন (২৮), তার ভাই মো. জামাল উদ্দিন (৪০), নুরুল ইসলামের ছেলে মাসুম (২৫), আবুল কালামের ছেলে নূর উদ্দিন (৩৫), স্থানীয় জঙ্গল লতিফপুর মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকতার (৫০), পাহাড় কাটার কন্ট্রাক্টর আজিজ (৫০), জাকির (৪০), সিফাত (২০), নিজাম (৪৫), লাল দুলালসহ (৪০) আরও ৯ জনকে মামলায় আসামি করা হয়।

দ্বিতীয় মামলায় একই এলাকায় বিএস প্যাকেজিং লি. নামক কারখানার বিপরীত পাশে একই দাগের স্থানীয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান জাহাঙ্গীর আলম (৪৮) স্থানীয় পাহাড় কাটার কন্ট্রাক্টর বদরুল ইসলাম (৬৫), জঙ্গল লতিফপুর সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে মো. জামাল উদ্দিন (৪০) সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন (৫০), আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে মহিউদ্দিন (২৮), আবুল কালামের ছেলে নূর উদ্দিন (৩৫), নুরুল ইসলামের ছেলে মাসুম (২৫), জাকির (৪০), সিফাত (২০), নিজামসহ (৪৫) মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ৪০ ফুট উঁচু একটি পাহাড় কেটে ৮ হাজার ঘনফুট মাটি অপসারণ করে।

তৃতীয় মামলায় আসামি করা হয়েছে ১০ জনকে। তারা পাহাড় কেটে সেখানকার ২ হাজার ঘনফুট মাটি অপসারণ করেছে বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে। চতুর্থ মামলায় ৩০ ফুট উঁচু একটি পাহাড় কেটে সাড়ে চার হাজার ঘনফুট মাটি অপসারণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার রিসার্চ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা অবৈধভাবে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখব। কেননা পাহাড় কাটার ফলে শুধুমাত্র পরিবেশের ক্ষতি নয় এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রও নষ্ট হচ্ছে। পাহাড় কাটার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনার কাজ চলছে। পাহাড় ধ্বংস রোধ ও পরিবেশ রক্ষাই আমাদের কাজ’।

এর আগে বায়েজিদ লিংক রোডে পাহাড় কেটে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের দায়ে একজনের বিরুদ্ধে মামলা ও পাহাড়ের উপর গড়ে তোলা বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রশাসন। গত মঙ্গলবার আকবরশাহ এলাকার শাপলা এলাকায়ও অভিযান পরিচালনা করে পাহাড় কেটে বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি করায় তা ধ্বংস, কাজ করা মিস্ত্রিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও পাহাড়ের মালিক এবং পাহাড় কাটার কন্ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কাট্টলী ভূমি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আরাফাত সিদ্দিকী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *