আনোয়ারাচট্টগ্রাম

আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকিটের মূল্য বাড়তি নেয়ার অভিযোগ

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগের ৩ টাকার টিকিট ৫ টাকা, জরুরি ভিত্তিতে (এমারজেন্সি) চিকিৎসা ফরমে ৩ টাকার স্থলে ১০ টাকা এবং এডমিশন ফরম ৫ টাকার জায়গায় ২০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন, এ বিষয়ে কিছু জানেন না। অন্যদিকে টিকিটের দায়িত্বরতরা বলছেন ভাঙতি না থাকাতে রোগীরা নিজ থেকে বাড়তি টাকা দিয়ে যায়।

জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে প্রতিদিন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রায় ৬ শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। প্রতিজন থেকে ২টাকা করে বেশি নেওয়া হলে দৈনন্দিন ১ হাজার ২শ এবং প্রতিমাসে ৩১ হাজার ২ শ টাকায় দাঁড়ায়।

আরও জানা যায়, জরুরি বিভাগে (এমারজেন্সি) প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসে যাদের কাছ থেকে চিকিৎসা ফরমের জন্য ৩ টাকা স্থলে ১০ টাকা নেওয়া হয়। সে হিসাবে মাস শেষে অতিরিক্ত দাঁড়ায় প্রায় ৪২ হাজার টাকা। এছাড়া আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গড়ে দৈনিক ৩০-৩৫ জন রোগী ভর্তি হয়। যাদের কাছ থেকে এডমিশন ফরম বাবদ ৫ টাকার স্থলে ২০ টাকা নেওয়া হয়।

সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে রোগীদের ভিড় রয়েছে। রোগীরা লাইন ধরে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করছেন। পুরুষ রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও নারীদের সংখ্যা রয়েছে অধিক। একজন মহিলাকর্মী টিকিট দিচ্ছেন। তিনি প্রতি টিকিটের জন্য পাঁচ টাকা করে নিচ্ছেন। এছাড়া কেউ ১০ কিংবা ২০ টাকার নোট দিলেও তাদেরকে ৫ টাকাই কেটে রেখে বাকি টাকা ফেরত দিচ্ছেন।

এসময় আরও দেখা যায়, টিকিটের মধ্যে ৩ টাকা লেখা থাকলেও কলমের কালি দিয়ে সেটি ঝাপসা কিংবা কেটে দেওয়া হয়েছে। জরুরি বিভাগে (এমারজেন্সিতে) গিয়েও একই অবস্থা দেখা যায়। বিভিন্ন রোগী আসছেন এবং চিকিৎসা ফরম বাবদ তারা ১০ টাকা করে প্রদান করছেন কর্তব্যরতদের।

এসময় বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আবুল কালাম নামে এক রোগী জানান, টিকিট ৫ টাকা দিয়ে নিয়েছে, আর এখানে সব সময় ৫ টাকা দিয়েই টিকিট নিই। তবে টিকিটের দাম যে ৩টাকা তিনি সেটা জানেন না বলে মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে ফোনে বহির্বিভাগে টিকিটের দায়িত্বরত আয়া তাসনিম সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিকেট ৩ টাকা, তবে ভাঙতি না থাকায় সবাই ৫ টাকা করে দিয়ে যায়। আপনি সবার কাছ থেকে টিকেটের দাম ৫টাকা করে রাখছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘শুধু বেশি নিচ্ছি সেটা দেখছেন, অনেকের কাছ থেকে কম নিচ্ছি সেটা দেখছেন না’ বলে ফোন কেটে দেন।

জরুরি বিভাগে (এমারজেন্সি) ও ভর্তি ফরমে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স গোলাম মাওলা জানান, চিকিৎসা ফরম ৩ টাকা ও এডমিশন ফরম ৫টাকা। বাড়তি টাকা নেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সম্পর্কে আমি জানি না। আপনি স্যার (টিএইচও)র সাথে কথা বলেন।’

তবে বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালে টিকিটের দায়িত্বে থাকা স্টোর কিপার মো. মনসুরুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা নেয় ঠিক আছে, এবিষয়ে স্যার (টিএইচও) অনেকবার বলছে, আমিও বাড়তে টাকা না নিতে কাউন্টারে অনেকবার বারণ করছি, তাঁরা (কাউন্টারে দায়িত্বরতরা) আমাকে জানায় যে তারা এমনিতেই বাড়তি নেয় না ভাঙতি না থাকলে তখনই শুধু নেয়।’

জানতে চাইলে আনোয়ারা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এরকম তো বাড়তি নেওয়ার কথা না, তবে অনেক সময় দেখা যায় ভাঙতি না থাকার কারণে ৩ টাকার জায়গায় রোগীরা ৫টাকা দিয়ে যায়। বাড়তি টাকা নেওয়া না হলে প্রতি টিকেটে নির্ধারিত মূল্যের সংখ্যাটি কলম দিয়ে কাটা রয়েছে কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ‘আপনার কাছে এমন কোনো টিকেট থাকলে পাঠান আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *