অন্যান্য

‘আমাগো হাসিনা নাই, তাই নৌকা বাইচও নাই’

‘সেই ছোটবেলা থেকে নৌকা বাইচ হইতে দেখছি। এবার বাইচ হইলো না।

আমাগো হাসিনা নাই, তাই এবার কেউ নৌকা লইয়া এইহানে (এখানে) বাইচ দিতে আইসে নাই। ’ এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কলাবাড়ি ইউপির কুমরিয়া গ্রামের বৃদ্ধা মালতী বিশ্বাস।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্র। যেখানে প্রতিদিনই রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এ উপজেলার রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের দিন কাঁটতো; সেখানে এখন আর তাদের দেখা মিলছে না। অনুষ্ঠিত হচ্ছে না কোনো প্রকার রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এমনই অবস্থার দেখা মিললো উপজেলার ঘাঘর নদীর কালীগঞ্জ বাজার নামক স্থানে। এখানে প্রায় ২০০ বছর ধরে বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কারণে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচটি বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানায় স্থানীয় জনসাধারণ।

গত বছর বিশ্বকর্মা পূজার দিনে শতাধিক বাচারি নৌকা, এই বাইচে অংশগ্রহণ করেছিল। সেখানে এ বছর মাত্র দুটি বাচারি নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করে। নৌকা বাইচ দেখার জন্য প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কোটালীপাড়া উপজেলার আশপাশের কয়েকটি জেলা, উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসেছিল। কিন্তু নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তাদের মনঃক্ষুণ্ন হয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়।

নৌকা বাইচ দেখতে আসা বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট গ্রামের সুধির বাগচী (৬০) বলেন, আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে বিশ্বকর্মা পূজার দিনে নৌকা বাইচ দেখতে আসি। এ বছরও নৌকা বাইচ দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু বাইচ না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছি। আমরা চাই বাঙালি জাতির ঐতিহ্যে লালিত ২০০ বছরের এই নৌকা বাইচটি যেন এখানে অনুষ্ঠিত হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলাবাড়ি গ্রামের একজন বাচারি নৌকার মালিক বলেন, এখানে নৌকা বাইচ মিলাতে কারো আয়োজন করতে হয় না। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে বাচারি নৌকা নিয়ে বাইচে অংশগ্রহণ করে। এ বছর আমাগো নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে না থাকায় আমরা নৌকা নিয়ে বাইচ দিতে আসি নাই। আমাগো নেত্রী দেশে ফিরগা আইলে আবার আমরা এই নদীতে আনন্দের সঙ্গে বাইচ দেব।

কলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বিজন বিশ্বাস বলেন, প্রায় ২০০ বছর ধরে এখানে নৌকা বাইচ হয়ে আসছে। এই বাইচের কোনো আয়োজন নেই। দেওয়া হয়না কোনো পুরস্কার। তারপরও মানুষ শত শত বাচারি নৌকা নিয়ে বিগত বছরগুলোতে এখানে বাইচে অংশগ্রহণ করেছে। এই বাইচ দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ এখানে উপস্থিত হতো। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে এলাকায় মেলা বসতো। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে থাকতো উৎসবের আমেজ। কিন্তু এবছর কেন এরা নৌকা নিয়ে বাইচ দিতে আসেনি তা আমার জানা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *