ধর্ম

ইসলামে বিশ্বাসঘাতকের কোনো স্থান নেই

মানুষের সততার জন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা, ন্যায়নীতি ও সরলতা। সেখানে প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, মিথ্যাচার, ধূর্ততা ও ফাঁকিবাজির কোনো স্থান নেই। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বর্ণনায় বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।

প্রতারণা যার সঙ্গেই করা হোক- মুসলিম কী অমুসলিম, তা সব সময়ই নিষিদ্ধ। প্রকৃত মুসলিম সর্বদা সত্যপরায়ণতার দিকে পরিচালিত হন। অর্থাৎ তখন তিনি প্রতারণা ও পরনিন্দা পরিহার করে চলেন সর্বতোভাবে।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে, সে আমাদের লোক নয় এবং যে কেউ আমাদের প্রতারিত করবে, সে-ও নয় আমাদের লোক। -সহিহ মুসলিম

আরেক হাদিসে আছে, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বাজারে খাদ্যশস্যের স্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এর ভেতরে হাত ঢোকালেন এবং অনুভব করলেন ভেজা ভেজা ভাব। অথচ স্তূপটির বাইরের দিক ছিল শুকনা। তিনি এই পণ্যের মালিককে জিজ্ঞাসা করলেন, ব্যাপার কী লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এই শস্য বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যশস্য কেন স্তূপের ওপরের দিকে রাখোনি তা হলে লোকজন তা দেখতে পেতো। যে প্রতারক, সে তো আমাদের কেউ নয়। ’ –সহিহ মুসলিম

মুসলিম সমাজের ভিত্তি অনুভূতির পবিত্রতা, ভালোবাসা, প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি দরদ এবং সমাজের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে অঙ্গীকার পূরণ। আর এই সমাজের সদস্যরা আল্লাহর ভয়, সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার গুণে গুণান্বিত। প্রতারণা কিংবা ধোঁকাবাজি সত্যিকারের মুসলমানের সুমহান চরিত্রের বিপরীত। ইসলামে কোনো জায়গা নেই জালিয়াত, বাটপাড়, প্রবঞ্চক, ধূর্ত ও বিশ্বাসঘাতকের।

প্রতারণা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য পাপ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতারকদের নিন্দা করেছেন এবং তাদের মুসলিম সমাজে অন্তর্ভুক্ত করেননি। শুধু তাই নয়; তিনি ঘোষণা করেছেন, শেষ বিচারের দিনে প্রত্যেক প্রতারকের পুনরুত্থান ঘটবে ওদের বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা বহন করা অবস্থায়।

হাশরের বিশাল ময়দানে একজন আহ্বানকারী প্রতারকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ এবং ওর প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে চিৎকার দিয়ে বলবেন, পুনরুত্থান দিবসে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের একটি করে পতাকা থাকবে এবং তার এই প্রতারণার ধরন তুলে ধরা হবে। -সহিহ বোখারি

নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন তিন ধরনের লোকের বিরোধিতা করব হাশরের দিন। তাদের একজন- যে কথা দিয়ে কথা রাখেনি।

আসলে মানুষের উচিত যাবতীয় প্রতারণা থেকে দূরে থাকা। পরীক্ষা, ব্যবসার লেনদেন, এমনকি স্বামী-স্ত্রী কিংবা ভালোবাসার মানুষজনের মধ্যেও প্রতারণা সাধারণ ব্যাপার।

প্রতারকদের সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চারটি বৈশিষ্ট্য আছে; যার এগুলোর সব ক’টিই রয়েছে সে প্রকৃত প্রতারক। আর যার মধ্যে দেখা যায় এগুলোর কোনো একটি বৈশিষ্ট্য- তার আছে মোনাফেকির একটি দিক যে পর্যন্ত না সে তা ত্যাগ করে। বৈশিষ্ট্য চারটি হচ্ছে- তাকে বিশ্বাস করা হলে সে করে বিশ্বাঘাতকতা করে। যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে। ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ঝগড়া বিবাদের সময় অন্যকে দেয় অপবাদ। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *