আন্তর্জাতিক

এমপি আনার হত্যা নিয়ে মমতার উদ্বেগ

সম্প্রতি রাজ্যের প্রশাসনিক বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভিন রাজ্য থেকে বহিরাগতরা যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে আসছে, তাতে বাংলার আইডেন্টিফিকেশন নষ্ট হয়ে যাবে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

একইভাবে, ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনারের হত্যা নিয়ে আরও একটি প্রশাসনিক বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করে পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেছেন, নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। যা হয়েছে তা ঠিক নয়। এতে বঙ্গবাসীও সহমত প্রকাশ করেছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, অবাঙালিদের ভিড়ে বাংলা তার বিশেষত্ব হারাচ্ছে। গত ২৪ জুন রাজ্যের হকার উচ্ছেদ এবং নিয়ন্ত্রিত করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এরপর তো দেখছি স্টেটের (রাজ্য) আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যাবে। বাংলায় কথা বলার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। হিন্দি, ইংরেজি জানাটাকে আমি খারাপ মনে করি না। আমি কোনও ভাষাকেই ছোট করছি না। সব ভাষাকেই গুরুত্ব দিয়ে বলছি, মনে রাখবেন প্রত্যেকটা রাজ্যে নিজস্ব একটা সত্তা আছে, একটা সংস্কৃতি আছে। আমরা অন্য সংস্কৃতিকেও ভালোবাসি, সম্মান জানাই। কিন্তু আইডেন্টিটি নষ্ট করে দেওয়ার চক্রান্তে যারা লিপ্ত হয়েছেন আমি তাদের সকলকে সাবধান করে দিতে চাই। অর্থের বিনিময় বাংলার আইডেন্টিটি নষ্ট যেন না হয়। ’

উল্লেখ্য, ২৪ সালের লোকসভা ভোটে বাংলার বসবাসরত অবাঙালি হিন্দুরা তৃণমূলকে ভোট দেয়নি। মুখ্যমন্ত্রী সাবধান বাণীর মাধ্যমে কেন্দ্রের মোদি সরকারে উদ্দেশ্যে বোঝাতে চেয়েছেন, অবাঙালিদের চক্রান্ত করে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকানো হচ্ছে।

তবে অবাঙালি বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে নিয়ে সহমত প্রকাশ করেছেন বঙ্গবাসী। তাদের অভিমত, সর্বত্র ভিন রাজ্যের আধিপত্য। বাঙালিরা যেন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। অবাঙালিদের পশ্চিমবঙ্গে থাকাতে তাদের আপত্তি নেই, বঙ্গবাসী জানাচ্ছেন, বাঙালিরা যখন ভিন রাজ্যে যাচ্ছে তখন সেখানে টিকে থাকতে সেই অঞ্চলের ভাষা আয়ত্ত করতে হচ্ছে। একইভাবে অবাঙালিদের পশ্চিমবঙ্গে থাকতে হলে বাংলা ভাষা শেখা উচিত। কেন তাদের সাথে হিন্দিতে কথা বলতে হবে? ভূমিপুত্ররা যদি নিজেদের মাতৃভাষা ভাষা হারিয়ে ফেলে তা হলে সত্যিই হারিয়ে যাবে বাংলা এবং বাঙালির অস্তিত্ব। এমনই মনে করছেন বঙ্গবাসী।

অপরদিকে, গত ২৭ জুন আরও একটি প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, ঝিনাইদহ ৪ আসনের এমপি আনারের হত্যার বিষয়। হকার উচ্ছেদের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, হকারের কাজ স্থানীয়রা করবে। অর্থাৎ যে অঞ্চলের বাসিন্দা তারাই হকারির কাজে লিপ্ত হতে পারেন।

মুখ্যমন্ত্রী উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয় হল, বহুদিন ধরেই ভিন এলাকা বা ভিন রাজ্য থেকে মানুষজন বাংলাজুড়ে হকারির কাজে যুক্ত হচ্ছেন। যে কারণে সরকার কোনো তাৎক্ষণিক খোঁজ রাখতে পারছেন না। সেই উদ্দেশ্যে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমাকে তো সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির বিষয়টাও দেখতে হবে। ’

পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘সবাই যে জেনুইন লোক কি করে বুঝবেন? এইতো দেখলেন কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এমপিকে বাংলায় নিয়ে এসে প্ল্যান করে হত্যা করা হলো। আমি তো পুলিশ চেঞ্জ করতে পারছি না। কারণ না প্রতিদিনই প্রায় ভোট। এতে সিস্টেমটাই ব্রেক হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে রাজ্যের প্ল্যানিং টাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ’

অহেতুক হকার বেড়ে যাওয়ার কারণে তার দলেরও এমপি, বিধায়ক এবং স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘এত লোভ কেনো? বেঁচে থাকতে হলে কত টাকার প্রয়োজন? ডাল, মাছ, ভাত হলেই তো হয়ে যায়। আগে পিছু না দেখে যাকে তাকে যেখানে সেখানে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে পথচারীদেরও সমস্যা হচ্ছে। ’

এই হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার নিউমার্কেটের হকারদের একমাস সময় দিয়েছেন। স্পষ্ট তিনি বলেছেন, যারা অযাচিত তারা জায়গা ছেড়ে দিক। আর যারা সত্যিই সৎভাবে হকারিটা করতে চায়, তারা যেন নিজেদের শুধরে নিয়ে শুধু বেচাকেনাটাই করে।

মূলত, এমপি আনার হত্যা ঘটনাই শুধু নয়। পরপর কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দুষ্কৃতিকারীদের উপদ্রব বেড়েছে। এমনকি প্রকাশ্যে গুলিও চলেছে। যা নিয়ে রাজ্যবাসী মনে করেছেন, এসব ঘটনা পশ্চিবঙ্গের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। সেই সুবাদের মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন, হকারির নাম করে বহু মানুষ অসৎ কাজে লিপ্ত হচ্ছে।

কয়েকমাস আগেও দেখা গিয়েছিল, কলকাতার মারক্যুই স্ট্রিটে মানিব্যাগ বা পার্স ছিনতাইয়ের কারণে বহু বাংলাদেশির পাসপোর্ট হারানো ঘটনা সামনে এসেছিল। সে সময়ও রাজ্য প্রশাসন এবং স্থানীয় ব্যবসায়িক কারণে, এখন তার নিষ্পত্তি ঘটেছে। সে অঞ্চলে নিরাপত্তা বেড়েছে।

সব মিলিয়ে রাজ্যের হকার উচ্ছেদ এবং নিয়ন্ত্রিত করতে, নানা প্রশাসনিক বৈঠকে এসব মন্তব্য করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, জাতির ভাষাই হলো জাতির গর্বের অলংকার। আর সেই বাংলা ভাষাই যদি বিপন্ন হয়ে পড়ে, তাহলে অচিরেই হারাবে বাঙালি তার অহংকার। অপরদিকে, এরকম একটা পরিকল্পিত হত্যা, সত্যি রাজ্যের জন্য লজ্জাজনক বলে মনে করছেন খোদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং বঙ্গবাসী। যে কারণে প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *