কর্ণফুলীতে ১৭ শিক্ষকের এক স্কুলে ১০৯ ফেল!
এবারের এসএসসি ফলাফলে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে নিচে অবস্থান চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের। এই বিদ্যালয়ের ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে অনেকেই বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে মানসম্মত শিক্ষকের অভাবকে মূল কারণ হিসেবে দুষছেন।
তথ্য বলছে, চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালে তিন বিভাগ থেকে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৮৭ জন, এর মধ্যে পাশ করেছেন ১৭৮ জন, ফেল করেছেন ১০৯ জন। একজন পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁদের পাশের হার ছিলো ৬২.০২%। কোন জিপিএ-৫ নাই। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার আশঙ্কাজনক ভাবে কমেছে।
এই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত ২০২৪ সালের এসএসসি’র বিষয়ভিত্তিক অকৃতকার্যের তালিকায় দেখা গেছে, এবারে ১০৯ ফেলের মধ্যে ইংরেজিতে ফেল করেছে ২১ জন, গণিতে ফেল করেছে ২১ জন, হিসাব বিজ্ঞানে ৩৮ জন, বিজ্ঞানে ৩০ জন, তথ্য ও যোগাযোগে ফেল ১৩ জন।
এছাড়াও ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং-এ ৭ জন, ব্যবসায় উদ্যোগে ৬ জন, ইতিহাসে ৪ জন, ভূগোলে ২ জন, অর্থনীতিতে ১ জন, পদার্থ বিজ্ঞানে ২ জন, রসায়নে ৫ জন, জীব বিজ্ঞানে ১ জন ও ইসলাম ধর্মে ১ জন। আবার অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছেন যারা উভয় বিষয়ে ফেল করেছেন।
একই বিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এসএসসি ফলাফল ছিল ২৮৬ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিলেন ২১৯ জন, ফেল করেছিলো ৬৭ জন। জিপিএ-৫ ছিল ৫ জন। আর পাশের হার ছিল তখন ৭৬.৫৭%। কিন্তু এবারে ছন্দপতন।
ইনস্টিটিউট ই-রিকুইজিশন অনুলিপি সুত্রে জানা গেছে, এমপিওভূক্ত এই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ৭ টি বিষয়ের শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বিষয়গুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, জীব বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পদার্থ বিজ্ঞান, গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান।
এর মধ্যে দুই বছর যাবৎ পদ খালি বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষকের। জীব বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞানসহ বাকি পাঁচ বিষয়ে শিক্ষক নেই দীর্ঘ ৮ বছর। বলতে গেলে বিজ্ঞান বিভাগ ও আইসিটির কোন এমপিওভুক্ত শিক্ষক নেই এই প্রতিষ্ঠানে।
৮ বছর যাবৎ শিক্ষক না থাকায় অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক দিয়ে কোন রকমে টেনেটুনে পড়াচ্ছেন বলে প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে। হয়তো এর প্রভাব পড়েছে এবারের এসএসসি ফলাফলে। আগের ব্যাচ ভালো করলেও এবারের ফলাফল বলছে, ইংরেজি, হিসাব বিজ্ঞান ও গণিতে ফেল করেছে ৮০ জন। মোট ১০৯ জন ফেলের মধ্যে এ সংখ্যাটি অনেক বড় দেখাচ্ছে।
ওদিকে, চরলক্ষ্যা এলাকার শিক্ষা সচেতন নাগরিকরা জানিয়েছেন মানসম্মত শিক্ষকের অভাবে দিন দিন ফলাফল নিম্নমুখী হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রতিষ্ঠানটিতে যথাযথ সময় দিতে না পারা এবং সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রধান শিক্ষকের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান এ অভিযোগ মানতে নারাজ।