‘কারাগারে রাজবন্দী নেই, আছে বিএনপির অ্যাক্টিভিস্ট’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘তারা (বিএনপি) বলছে যে, হাজার হাজার রাজবন্দী- আমি বলবো রাজবন্দী বলতে আমাদের এখানে কেউ নেই। আমাদের কাছে বন্দী আছে বিএনপির অ্যাক্টিভিস্ট।’
শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের কনভেনশন হলে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাজবন্দী বলতে আমাদের এখানে কেউ নেই। যারা প্রধান বিচারপতির বাসায় ভাঙচুর করেছে, যারা আমার পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, যারা আমার আনসার পিটিয়ে হত্যা করেছে, যারা আমাদের মেয়েদের গায়ে হাত দিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যেটা পুলিশ করছে।’
২০১৪ সালেও বিএনপি একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচনকে বানচালের চেষ্টা করেছে অভিযোগ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তবে ক্রমান্বয়ে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা জাতীয় সংসদের ৩০টি, ২০১৮ ছয়টি আসনে জয় পেয়েছিল।’
বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে ইংল্যান্ডে গেছেন, আত্মগোপন করেছেন…আমরা দেখলাম, তার (তারেক রহমান) নির্দেশ অনুযায়ী দলটির সেক্রেটারি জেনারেল পদত্যাগ করেছেন। ইংল্যান্ডে বসে থেকে তিনি এ দেশে তার দলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। শুধু এ দেশের জনগণ নয়, তার দলীয় নেতাকর্মীদেরও ভালো-মন্দ তিনি চান না। দিন দিন এই দলটি জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী… আপনারা দেখেন, যেখানে যাবেন তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে যতোদিন প্রধানমন্ত্রী বেঁচে থাকবেন ততদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’
সংবিধান অনুযায়ী যেভাবে বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তার পরিবেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৃষ্টি করে দিয়েছেন উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করেছে। নির্বাচনকালে নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করেছেন। গত নির্বাচনে অনেক মন্ত্রী, বড় বড় নেতা এই নির্বাচনে ধরাশায়ী হয়েছেন। কাজেই আমরা সুনিশ্চিত করে বলতে পারি এই নির্বাচনে কোনও ধরনের কারচুপি হয়নি বা কোনও ধরনের সাপোর্ট কেউ পেয়েছে বলে আমরা মনে করি না, দেখিওনি।’ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যে দলটির কথা বললাম, এই দলটি নানান দেশে নানান সময়ে নানান ধরনের অপপ্রচার করছে। গত ২৮ অক্টোবর নির্বাচনের আগে তারা কী একটা সহিংস অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে! আমরা কোথাও দেখিনি, পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই— প্রধান বিচারপতি বাসভবনে হামলা, হাসপাতালে ভাঙচুর করার দৃশ্য, সাংবাদিকদের নির্যাতন, মারধর করা দৃশ্য, জাজেস কম্পাউন্ডের ভেতরে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করা দৃশ্য আমরা কখনও দেখিনি। আসলে এসব করা হয়েছে মূলত তারা নিশ্চিত হয়েছে যে, নির্বাচনে আসলে তাদের পরাজয় হবে, জয়ী হতে পারবে না, সেজন্য তারা এ ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এখন তারা বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অপপ্রচারের কোনও সত্যতা নেই।
দেশে অন্যায়ভাবে বা রাজনৈতিকভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার কোনও ভিত্তি নেই। তবে তারা নির্বাচনের পরে মনগড়া তথ্য প্রচার করে বিদেশিদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। অথচ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশি সাংবাদিকরা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বলেছেন যে, বাংলাদেশের নির্বাচনের সুষ্ঠু হয়েছে। আমেরিকারও দুই একটি সংগঠন বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।’
‘তবে কে কী বললো, সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় না। আমাদের দেশে একটি সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। আগামীতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও এগিয়ে যাবে’, প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছিল, হামলা-মামলা করে বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছিল। নির্বাচন সংক্রান্ত ও গণ-গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছেন কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোনও হামলা-মামলা আমাদের পুলিশ বাহিনী, আমাদের পলিটিক্যাল দল করেনি। তারাই (বিএনপি) করেছে, এখন তারা করে তারাই যদি অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা তরে তাহলে আমরা এধরনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা মনে করি, এগুলো সত্যের অপলাপ। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আরেকটি ষড়যন্ত্রের একটা নতুন ক্ষেত্র তৈরির প্রচেষ্টা নিচ্ছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা অনুযায়ী, বিএনপি বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কিসের ভিত্তিতে বা বিনিময়ে স্টেটমেন্টগুলো দিচ্ছে— এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্রমাগতভাবে বিএনপি মিথ্যে তথ্য প্রচার বা দিয়ে যাচ্ছে। তারা কে কীভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন, সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা স্পষ্ট করে বলতে পারি, তারা যেসব বলছেন সেসব দেশে ঘটেনি। দুয়েকটি দেশ বাদে সব দেশ সাধুবাদ ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তারা মনে করেন দেশে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে।