দেশজুড়ে

খুতবায় আ.লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন নিয়ে বয়ান, চাকরি গেল ইমামের

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় জুমার নামাজের বয়ানে আওয়ামী লীগ সরকারের জুমুল-নির্যাতন নিয়ে কথা বলায় মাওলানা মুজাহিদুল হক (৩৫) নামে এক ইমামকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মুরাটিয়া গ্রামের মধ্যপাড়া জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।

ইমামের চাকরিচ্যুতের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেলে ভুক্তভোগী ইমাম হাফেজ মাওলানা মুজাহিদুল হক বলেন, মুরাটিয়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদে গত আট মাস ধরে ইমামতি করছি। গত ৯ আগস্ট জমার নামাজের বয়ানে জালিমের জুলুম-নির্যাতনের পরিণাম কি হয়, তা নিয়ে কথা বলি। একইসঙ্গে ২০১৩ সালের ৫মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হামলার বিষয়টি তুলে ধরি।

এ সময় কালাম নামে এক মুসল্লি আমাকে বয়ানে বাধা দেন। তখন আরেক মুসল্লি আমার পক্ষ নিলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মসজিদের সভাপতি। পরে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় আমি বয়ান বন্ধ করে দেই। একপর্যায় নামাজ শেষে সভাপতি আমাকে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। পরে আমি চলে আসছি।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, বর্তমান সমাজে সত্য কথার দাম নেই। সত্য কথা বললেই পেটে লাথি দিতে চায় সবাই।

মুরাটিয়া গ্রামের মুসল্লিরা জানায়, মধ্যপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাঝারদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আফছার মাতুব্বরের ছেলে মো. স্বপন মাতুব্বর। আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে বিধায় তাকে মসজিদের সভাপতি নির্বাচিত হয়।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৯ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজের বয়ানে মসজিদের ইমাম মুজাহিদুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন নিয়ে কথা বলেন। এ সময় সভাপতির সমর্থকরা ইমামের বয়ানে বাধা দেন। পরে নামাজ শেষে সভাপতি ইমামকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

বিষয়টি জানতে মুরাটিয়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি মো. স্বপন মাতুব্বরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে স্বপনের বাবা মাঝারদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আফছার মাতুব্বর বলেন, ইমাম সাহেব ধর্মীয় বয়ান বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতেছিল। পরে ঝামেলা বাধালে তিনি চলে যান। আমরা তাকে চাকরিচ্যুত করেনি। তিনি একাই চলে গেছেন। এখন আমরা ভালো একজন ইমাম রাখবো।

এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেক আলেম-ওলামা পোস্ট দিয়েছেন। সালথা মডেল মসজিদের ইমাম মুফতী রবিউল ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, মুরাটিয়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদের ইমামকে জোরপূর্বক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মসজিদ কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ তাওহিদি জনতা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।

বেলায়েত হোসেন নামে একজন ইসলামিক লেখক তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলা ইমামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মসজিদের সভাপতি নাকি হুমকি দিয়ে বলেছে, যেসব আলেম এসব নিয়ে কথা বলবে তাকে বিলের পানিতে চুবাবো। সালথার মতো আলেম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদের সভাপতির এমন আচরণ কেন?।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *