খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার দুয়ার
পাহাড়ের বুক চিরে এঁকেবেঁকে এগিয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন; একদিন যা স্বপ্ন ছিল আজ তা মূর্ত হয়ে উঠছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের নিরলস পরিশ্রম আর অসীম সাহসিকতায়। নয়নাভিরাম পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তজুড়ে সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে কালো পিচঢালা সড়ক দিনে দিনে মূর্ত হয়ে উঠছে। খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার সব অজানা দুয়ার। বান্দরবানের ঘুমধুম থেকে শুরু হয়ে খাগড়াছড়ির রামগড় পর্যন্ত নির্মাণাধীন এই সড়ক ধরে যে কেউ একবার এগিয়ে গেলে বারবার যেতে মন চাইবে। খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার দুয়ার
যাকে বলা হচ্ছে ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ সড়ক। পাহাড়ি পথে এঁকেবেঁকে যাওয়া এ সড়ক কতটা সুন্দর তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। কোথাও খাড়া পাহাড়, আবার কোথাও একবারে নিচু। এ সড়কের অপরূপ সৌন্দর্য যেমন মানুষকে বিমোহিত করবে, আবার সামান্য ভুল কিংবা ছোট কোনো দুর্ঘটনা কেড়ে নিতে পারে সব কিছু। তবে চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত এমন সাহসী পর্যটকদের জন্য চমৎকার একটি পর্যটন অঞ্চল হতে পারে এই সড়কটি এবং তার দুই পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
গত শুক্রবার (৮মার্চ) রাঙামাটির সীমান্তবর্তী উপজেলা জুরাছড়ির সাইচল এলাকা অংশে নির্মিত এই সড়ক শুক্রবার পরিদর্শ করেছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশে শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলোতে কাজ করা জনা ত্রিশেক সাংবাদিক। সড়কটি দেখে সবাই যেমন মুগ্ধ, তেমনি অবাক। এমন দুর্গম এলাকা উন্নয়নের ছোঁয়ায় এভাবে বদলে যাবে, তা হয়তো কারো কল্পনাতেও ছিল না।
পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ১০৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত ঘিরে এই সড়কের মূল স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের তালিকার প্রথম দিকে থাকা এই সড়কটি হতে যাচ্ছে দেশের দীর্ঘতম সড়ক। ইসিবি-২৬ (ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। ৩ হাজার ৮শ’ ৬১ কোটি টাকার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজের ৮৫% কাজ শেষ, বাকিটাও চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানালেন প্রকল্প পরিচালক কর্নেল ভূঁইয়া মো. গোলাম কিবরিয়া।
জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে দৃশ্যপট বদলে দিতে বর্তমান সরকার ২০১৯ সাল থেকে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করে। কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৭, ২০ এবং এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে। সীমান্ত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১০৩৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে একনেকে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
শুক্রবার (৮ মার্চ) রাঙামাটি জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা জুরাছড়ির সাইচলে স্থাপিত অস্থায়ী প্রকল্প ক্যাম্পে গিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী।
যোগাযোগ সচিব এ সময় বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আশা করা যায় এই নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এক ঝটকায় পরিবর্তন হয়ে যাবে সাধারণ পাহাড়বাসী মানুষের জীবনযাত্রার মান ও কৃষি বিপণন ব্যবস্থা।
এ সময় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের প্রধান প্রকৌশলী মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস পিএসপিস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন, অতিরিক্ত সচিব এ কে এম শামীম আক্তার, কার্যক্রম বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার আহসান হোসেন, আইএমইডি’র মহাপরিচালক, মো জহির রায়হান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব গৌতম চন্দ্র পাল, অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. আবদুর রহিম, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম সচিব নিখিল কুমার দাস, সওজ চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো, আতাউর রহমান, রাঙামাটি সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোফাজ্জেল হায়দার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ, ইসিবির ২৬ এর প্রকল্প পরিচালক কর্নেল ভূঁইয়া মো. গোলাম কিবরিয়া ও রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওযাৎ হোসেন রুবেল প্রমুখ।
প্রকল্প পরিচালক ভূঁইয়া মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া জানান, এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের দৈর্ঘ্য মোট ৩১৭ কিলোমিটার। এই মুহূর্তে এ প্রকল্পে ৯টি পেভম্যান্ট ভাগ করে কাজ করা হচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলাতেই আছে এর অংশ। যেটা ঘুমধুম থেকে শুরু হয়ে খাগড়াছড়ির রামগড় পর্যন্ত বিস্তৃত।