কক্সবাজারচট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ ৮০ হাজার কৃষক

আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রাস্ত ১ লাখ ৮০ হাজার কৃষক। ফলন আসার আগ মুহূর্তে নষ্ট হয়ে গেছে আমন ধান। ফলে বর্তমানে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় শতকরা ক্ষতির হার ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ বলছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সম্প্রতি অতি মাত্রায় টানা বৃষ্টি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ড ও দক্ষিণের পেকুয়া, চকরিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার প্লাবিত হয় কৃষকদের ঘাম ঝরানো ফসল। এর মধ্যে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফটিকছড়ি ও পেকুয়া উপজেলা।

সংস্থাটি বলছে, আকস্মিক বন্যায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে প্লাবিত হয়েছে বীজতলায় থাকা অবস্থায় ২ হাজার ২৯০ হেক্টর আমন। এছাড়াও, ৯ হাজার ৬১৬ হেক্টর আবাদকৃত আউশ, ২ হাজার ৭৪৯ হেক্টর শাঁক-সবজি এবং ফলবাগান, আদা, হলুদ, আখ, পানসহ মোট ৭১ হাজার ৬৫৩ হেক্টর জমি। এর মধ্যে প্লাবিত জমির থেকে পানি নামার পর ক্ষতির অংক দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৬৩৮ হেক্টর। ফলে ৪শ ৩৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ফসল নষ্ট হয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিভিন্ন এলাকায়।

উপজেলাভিত্তিক তথ্যে বলা হয়েছে, গত ১০ দিনে ফটিকছড়ি উপজেলায় জমি প্লাবিত হয়েছে ২০ হাজার ৬১১ হেক্টর এবং কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৭ হেক্টর জমি। দুই উপজেলায় সর্বাধিক প্লাবিত হয়েছে আবাদকৃত আমনের জমি। সর্বমোট ২১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমি বর্তমানে পানির নিচে। এছাড়াও বিচতলায় থাকাকালীন আমনের সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে মিরশরাই ও চকরিয়া উপজেলায়। দুই উপজেলায় মোট প্লাবিত হয়েছে মোট ১ হাজার ১১৫ হেক্টর ।

ইতোমধ্যে দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা তৈরি করছে ক্ষতিগ্রাস্থ কৃষকদের তালিকা। চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ফটিকছড়ি উপজেলায় গত দুই সপ্তাহ যাবত টানা বৃষ্টিপাত হয়। পরে গত সপ্তাহের বুধবার ফটিকছড়ির হালদা ও ফেনী নদীর পানি বাড়তে থাকে। ফলে এই উপজেলায় অনেক কৃষক সর্বস্বান্ত হয়েছে। এই উপজেলায় শরৎকালীন সবজি প্লাবিত হয়ছে ৪২৫ হেক্টর। আমরা তালিকা করে ক্ষতি পূরণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ চলছে।’

এদিকে, গত ১০ দিনে পাহাড়ি ঢলের কারণে প্লাবিত হয়েছে পেকুয়া উপজেলার চার ইউনিয়ন। বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার নুর পেয়ারা বেগম বলেন, রাজাখালী, টৈটং, বারবাকিয়া ও শিলখালী ইউনিয়ন ফসলী জমির পরিমাণ বেশি থাকায় জমির ফসল ভেসে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান সিভয়েস২৪-কে বলেন, ১০ দিনে চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুই জেলায় ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতি হয়েছে। বীজতলা থেকে শুরু করে আবাদকৃত আমন বন্যায় নষ্ট হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিতের পর কৃষকদের জন্য প্রনোদনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বীজ কোনো কোনো এলাকায় কাজে আসবে না। বন্যার পানি নামতে আরও চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগতে পারে। এই মুহূর্তে বন্যাকবলিত এলাকায় বীজতলা তৈরি করে আমনের চারা সরবরাহ করা কষ্টসাধ্য হবে। ফলে বীজতলা তৈরির জায়গা নেই। তাই আশপাশের এলাকায় বীজতলা তৈরি করে চারা আকারে বন্যাদুর্গত এলাকায় সরবরাহ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *